নাছির উদ্দিন: এ যেন ভারতের তাজমহল! দেখতে অনেকটা আগ্রার তাজমহলের মত। বাহিরটা ধবধবে সাদা রঙে আবৃত। স্থাপনার সামনে সবুজ বেষ্টনী আর আরসিসি ঢালাই করা বিশাল মাঠ।
দু’পাশে দু’টি পুকুর। আর পুকুরে সানবাঁধানো ঘাট, পুকুর ধারে ঘাটের পাশে কাঠ বাদাম গাছেরনীচে মেঘের মত ছায়া, সত্যিই মনোমুগ্ধকর।
এখানে বসন্তের পড়ন্ত বিকেলটা এনে দেয় অন্যরাকম অনুভূতি! যা স্বচোখে না দেখলে বোঝাই যাবে না। এ নান্দনিক স্থাপনা ও মনোরম পরিবেশ এক নজর দেখতে অনেকেই ছুটে আসেন দূর-দূরান্ত থেকে। তুলে নেন ছবি।
বলছিলাম, ফখরুদ্দিন মাহমুদ জামে মসজিদের কথা। এটি স্থানীয়ভাবে বাংলা ‘তাজমহল মসজিদ’ নামে পরিচিত।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, পুরো মসজিদটি সাদা রঙে আবৃত। এটি তৈরী করা হয়েছে ভারতের আগ্রার তাজমহলের আদলে। এতে ৩টি গম্বুজ, যার চার পাশে সাঁই দাড়িয়ে আছে চার মিনারের পিলার।
এ মসজিদটি দোলতলার। নীচ তলায় একসাথে ২৫০ জন পুরুষ মুসল্লির নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রয়েছে। আর দোতলায় ২৫০ জন নারী মুসল্লির জন্য। এতে মোট ৫০০ জন একসাথে নামাজ আদায় করতে পারবেন।
দোতলায় উঠার জন্য মসজিদের ভেতরে দু’পাশে দু’টি সিঁড়ি। প্রতিদিন মাদরাসার শিক্ষার্থীদের সাথে স্থানীয়রা একসাথে জোহরের নামাজ আদায় করেন।
অনেকে নামাজ আদায় করার এবং মসজিদের আশপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য দুর-দূরান্ত থেকে এখানে আসেন।
স্থানীয়রা অনেকে বিকালে আছরের নামাজ আদায় করে পুকুর ঘাটে কিংবা মাঠে বসে সময় কাটান মাগরিব পর্যন্ত। অনেকে মাগরিব থেকে এশার পর্যন্ত। নিরিবিলি ও পাকৃতিক মনোরম পরিবেশ হওয়ায় বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে অনেকের আগ্রহী হয়ে দূর থেকে ছুটে আসেন।
মসজিদটির অবস্থান ঃ চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলার ঢাকা-চট্টগ্রাম পুরাতন মহাসড়কের জোরারগঞ্জ বাজারের দক্ষিণ পশ্চিম প্রান্তে এই মসজিদের অবস্থান।
মসজিদের নির্মাণকাল ও প্রতিষ্ঠাতাঃ মসজিদটির প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল বিগত ১৯৯১ সালে। স্থানীয় ৬ নং ইছাখালি ইউনিয়নের বাসিন্দা মরহুম মৌলভী নজির আহমদের ছেলে প্রয়াত আলহাজ¦ সফিউল্লাহ তার নিজস্ব জমিতে এই মসজিদটি স্থাপন করেন।
সে সময় তিনি প্রায়ই ভারতে সফরে যেতেন। তখন তিনি তাজমহলের সৌন্দর্যের প্রতি মুগ্ধহন। সেই মুগ্ধতার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে তাজমহলের আদলে দেশে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন।
ভারতের আগ্রায় স্থানীয় প্রকৌশলীর সহায়তায় পুরো তাজমহলের আদলে হার্ডবোর্ডে সম্পূর্ণ একটা নকশা তৈরী করেন। যা পরবর্তিতে তিনি স্বদেশে এসে প্রকৌশলীর সহায়তায় স্থানীয় বিল্ডিংয়ের ঠিকাদার তোফায়েলকে এটার নির্মাণ কাজের দায়িত্ব দেন। তিনি দীর্ঘ সময় ব্যয় করে এ মসজিদ নির্মাণ করেন।
মসজিদের নামকরণঃ মসজিদটির নাম করণ করেন- তাঁর ছেলে মরহুম ফখরুদ্দিন মাহমুদের নামে। মসজিদের পুরোনাম ফখরুদ্দিন মাহমুদ জামে মসজিদ। ফখরুদ্দিন মাহমুদ ভারতে শিক্ষার্জনের জন্য যান। সেখানে অনাকাঙ্খিত একটি দূর্ঘটনায় তিনি নিহত হন। পরে তার স্মৃতি স্বরুপ মসজিদটির নাম করণ করা হয়। যদিও স্থানীয়ভাবে এখন এটি তাজমহল মসজিদ নামে পরিচিত।
মাদরাসা প্রতিষ্ঠাঃ আলহাজ¦ সফিউল্লাহ শুধু মসজিদ নির্মাণ করে খ্যান্ত হননি। মসজিদের খোরাক মুসল্লি জোগান দিতে তিনি মসজিদের উত্তর এবং দক্ষিণ প্রান্তে দ্বিতল বিশিষ্ঠ দু’টি একাডেমিক ভবন নির্মাণ করেন।
সেখানে বিগত ২০০০ ইংরেজী সাল থেকে একটি দাখিল মাদরাসার কার্যক্রম শুরু হয়। যা তার পিতা মরহুম মৌলভী নজির আহমদের নামে নাম করণ করেন ‘মৌলভী নজির আহমদ আদর্শ দাখিল মাদরাসা।’ বর্তমানে এ মাদরাসার শিক্ষা কার্যক্রমে উপজেলার শ্রেষ্ঠ একটি বিদ্যাপীঠে পরিনত হয়েছে। উপজেলা জুড়ে বেশ নাম-ডাক রয়েছে মাদরাসাটির।
নাছির উদ্দিন, মিরসরাই, চট্টগ্রাম।
” ”> ” ”>