নিজস্ব প্রতিনিধি: আনোয়ার খান। পেশায় দেশের চিকিৎসা খাতের একজন ব্যবসায়ী। যদিও তার ব্যবসা নিয়েও রয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।
তার প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসার নামে মোটা অংকের ‘টাকা হাতিয়ে নেয়ার’ অভিযোগের একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে দেশের মূলধারার বিভিন্ন গণমাধ্যমে।
ব্যবসায়ী থেকে ‘হঠাৎ নেতা’ হওয়া এই জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে রয়েছে যৌন হেনস্থাও অভিযোগ। ইতোমধ্যে মি টু আন্দোলন চলাকালে আনোয়ার খানের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানীর অভিযোগ করেছেন এক নারী।
আর বিতর্কিত এই ব্যবসায়ী লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে হঠাৎ উড়ে এসে ‘টাকার বিনিময়ে’ সংসদ সদস্য হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। যদিও বিএনপির সাবেক এক নেতা (মন্ত্রী) ও তার অনুসারীদের বিপুল অংকের টাকা অনুদান দেয়ার অভিযোগ রয়েছে আনোয়ার খানের বিরুদ্ধে।
এ নিয়ে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে ক্ষোভ-অসন্তোষ। এ সাংসদকে কেন্দ্র করে কোন্দলে জড়িয়ে পড়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ।
আধিপত্য বিস্তার নিয়ে রামগঞ্জে সাংসদ আনোয়ার খানের অনুসারীদের সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে একাধিকবার।
যেভাবে রাজনীতিতে উত্থান আনোয়ার খানের:
তথ্য অনুসন্ধ্যানে জানা গেছে, ২০১৪ সালে জাল-জালিয়াতের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ১৮শ’ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠে আনোয়ার খানের বিরুদ্ধে।
ওই ঘটনায় দুদকে তলব ও অভিযোগের পর, নিজেকে রক্ষার জন্য রাজনৈতিক আশ্রয় খোঁজেন তিনি। দ্বারস্ত হন লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক এডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধূরী নয়নের। জেলা পুলিশ প্রশাসনকে দেন গাড়ি উপহার।
যাতায়াত শুরু করেন নিজ এলাকা লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে। যদিও এরআগে তাকে এলাকায় তেমন একটা দেখা যায়নি। পরে জেলা আওয়ামী লীগ একটি জরুরী সভা ডেকে জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতার সরাসরি হস্তেক্ষেপে আনোয়ার খানকে রামগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন প্রস্তুতী কমিটির আহবায়ক করা হয়।
পরে ঢাকার একজন পত্রিকা সম্পাদকের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে তার সখ্য গড়ে উঠে। ওই সম্পাদকের মাধ্যমে নিজেও গণমাধ্যমের মালিক হিসেবে আত্মপ্রকাশের কাজ শুরু করেন।
এর কয়েকদিন পরেই, জালিয়াতের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ১৮শ’ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ দুদকে খারিজ হয়। পরে এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমেই তিনি ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান এবং লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
কথিত রয়েছে, বঙ্গবঙ্গু পরিবারের এক সদস্যদের মাধ্যমে রাজনীতিতে নাটকীয় উত্থান বিতর্কিত ব্যবসায়ী আনোয়ার খানের। বঙ্গবন্ধু পরিবারের ওই সদস্যও বর্তমানে খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য।
আনোয়ার খানের অবস্থান: এলাকায় বর্তমানে তার নিজস্ব একদল অনুসারী রয়েছেন। সম্প্রতি স্থানীয় একটি ইউনিয়ন পরিষদের উপ নির্বাচনের ও জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় আধিপত্য নিয়ে তার অনুসারীরা সংর্ঘষ লিপ্ত হয়।
এছাড়াও উপজেলার নোয়াগাঁও জনকল্যাণ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা এমএ মমিন পাটোয়ারী ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষ্যে একটি সমাবেশের আয়োজন করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আনোয়ার খানের অনুসারীরা সভামঞ্চটি ভেঙ্গে দেয়। পরে অবশ্য মমিন পাটেয়ারীর বাড়ির সামনে ওই সমাবেশ হয়।
বর্তমানে তার অনুসারীদের হাতেই রয়েছে লক্ষ্মীপুর-১ রামগঞ্জ আসনের নিয়স্ত্রণ।
তবে আনোয়ার খানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত এমন একজন নাম পরিচয় না জানানো শর্তে জানিয়েছেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি অরাজনৈতিক লোক। তিনি নিজে রাজনীতিতে কখনো সরাসরি সস্পৃক্ত ছিলেন না। তার উপর ক্ষিপ্ত হয়েই দলের একটি অংশ আনোয়ার খানের দিকে ঝুঁকেছে।
