আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন উপলক্ষ্যে লক্ষ্মীপুরের ৪টি পৌরসভায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের নামের তালিকা কেন্দ্রে পাঠিয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ।
যদিও তালিকা পাঠানোর আগ থেকেই দলীয় মনোনয়ন পেতে তদবীরে ব্যস্ত রয়েছেন লক্ষ্মীপুরের ৪টি পৌর এলাকার আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা।
তবে লক্ষ্মীপুর পৌরসভায় (সদর) আওয়ামী লীগের ১০জন প্রার্থীর নাম কেন্দ্রে পাঠানো হলেও সেখানে বর্তমান মেয়র আবু তাহেরের নাম নেই বলে জানিয়েছে দলীয় সূত্র।
মেয়র থাকাকালে আবু তাহের বিএনপি ও জামায়াতকে বিভিন্নভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু।
আবু তাহের জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক ও লক্ষ্মীপুর পৌরসভার বর্তমান মেয়র। তিনি তিন বার মেয়র নির্বাচিত হন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর পৌরসভায় (সদর) মেয়র প্রার্থী পদে ১০জন প্রার্থীর তালিকা কেন্দ্রে জমা দেয়া হয়েছে। তালিকায় রয়েছেন, জেলা আওয়ামী লীগ সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক মোজাম্মেল হায়দার মাসুম ভূঁইয়া, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক আবদুল মতলব, শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন লিকা, জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য মনিরজ্জামান পাটওয়ারী,জেলা যুবলীগ সাবেক আহ্বায়ক সৈয়দ সাইফুল হাসান পলাশ, পৌর আওয়ামী লীগ ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট জহির উদ্দিন বাবর, পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ও জেলা শ্রমিক লীগ আহ্বায়ক মামুনুর রশিদ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি বেলায়েত হোসেন বেলাল।
এতে গত ৩ বারের মেয়র, এবারও মেয়র প্রার্থী আবু তাহেরের নাম নেই।
এছাড়াও রায়পুর পৌরসভায় প্রার্থীদের তালিকায় রয়েছেন, পৌর আওয়ামী লীগ সাবেক সভাপতি ও সাংসদ শহিদ ইসলাম পাপুলের অনুসারী রফিকুল হায়দার বাবুল পাঠান, রায়পুর উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বর্তমান মেয়র ইসমাইল খোকন, রায়পুর পৌরসভা প্যানেল মেয়র কাজী নাজমুল কাদের গুলজার, উপজেলা আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশীদ ও সাবেক ছাত্র নেতা আমেরিকা প্রবাসী গিয়াস উদ্দিন রুবেল।
রামগঞ্জ পৌরসভায় পৌর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র বেলাল আহমেদ, পৌর আ’লীগ সভাপতি বর্তমান মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের পাটওয়ারী, উপজেলা আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক আকবর হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল ইসলাম সেলিম ও নুরুল আলম।
রামগতি পৌরসভায় জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য ও বর্তমান মেয়র মেজবাহ উদ্দিন মেজু, যুবলীগ নেতা সোয়াইব হোসেন খন্দকার, পৌর আ’লীগ সাধারণ সম্পাদক ওয়ারেছ মোল্লা, উপজেলা আওয়ামী লীগ সাংগঠানক আবু নাসের, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা শাহ মোহাম্মদ রাকিব ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য ও সাবেক মেয়র আজাদ উদ্দিন চৌধুরী।
এব্যপারে লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু বলেন, তৃণমূল নেতকর্মী ও ভোটারদের মতামতের ভিত্তিতে দলীয় মেয়র প্রার্থীদের নামের তালিকা কেন্দ্রে জমা দেয়া হয়েছে। তবে বিগত দিনে কেন্দ্রের নির্দেশ অমান্য করে দলের বিরুদ্ধে যারা অবস্থান নিয়েছে, ভোট করেছে, তাদের নাম না দেয়ার জন্য কেন্দ্র থেকে কঠোর নির্দেশ রয়েছে।
তিনি বলেন, ৩ বার নির্বাচিত মেয়র আবু তাহের টানা ১০ বছর মেয়র থাকাকালে দলের নেতাকর্মীদের উপকার হয়নি। এর আগেও ১৯৯৬ ইং থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি মেয়র ছিলেন। তিনি মেয়র থাকাকালে বিএনপি ও জামায়াতকে বিভিন্নভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
তিনি বলেন, আবু তাহেরকে একক মেয়র প্রার্থী হিসেবে ঘোষনা দেয়ার জন্য পুলিশ সুপার কার্যালয়ে তাকে গত ২ ডিসেম্বর (সভাপতি পিংকুকে) চাপ প্রয়োগ করা হয়। মেয়র তাহের তাকে হুমকি দিয়ে বলেন, এককভাবে মনোনীত করা না হলে তাকে লক্ষ্মীপুরে থাকতে দেবেন না।
জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আরও বলেন, তাহের এর মাধ্যমে দলের নেতাকর্মীদের উন্নয়ন হয়নি। উন্নয়ন হয়েছে তাহেরের নিজের এবং তাঁর আত্মীয়-স্বজনদের।
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার মেয়র আবু তাহেরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি।
অপরদিকে তার মেঝো ছেলে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগ সভাপতি একেএম সালাহ উদ্দিন টিপু বলেন, আমার বাবার জনপ্রিয়তা দেখে একটি পক্ষ উঠে লেগেছে উনার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে। অন্য কাউকে মনোনয়ন দিলে তাদের ভরাডুবি হবেই। আমার বাবা দলের জন্য যথেষ্ঠ করেছে। অন্য কেউ সেটি করেনি। তাঁকে মনোনয়ন দিলে তিনি বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হবেন।
লক্ষ্মীপুরের পুলিশ সুপার ড. এএইচএম কামরুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সেদিন চা খাওয়ার সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি পিংকু সাহেব এবং পৌর মেয়র তাহের দু’জনের মধ্যে কিছু কথা হয়েছে। সেদিন সেটি সমাধা হয়ে গেছে।
অপরদিকে আসন্ন পৌর নির্বাচনকে নিয়ে জেলা বিএনপি আবুল খায়ের ভূঁইয়া বলেছেন, এ সরকারের আমলে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে আশা করা যায়না। নির্বাচনের পরিবেশ থাকলে আমরা দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষনা করবো। নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্ঠি করতে হবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।
নিজস্ব প্রতিনিধি/লক্ষ্মীপুর/এমআর
” ”> ” ”>