করোনা দূযোর্গে দেশে ফেরতেই ডা. খন্দকার ফেরদৌসকে নিয়ে চলছে তুলকালাম।
একটিপক্ষ তাকে বঙ্গবন্ধু’র খুনী মোশতাকের ভাতিজা ও কর্নেল রশিদের খালাতো ভাই উল্লেখ্য করে ফেসবুকসহ সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারণা চালিয়েছে।
আরেকটি পক্ষ করোনায় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইর্য়কে ইতিবাচক কাজে দেশের সুনাম বৃদ্ধি করায় তাকে মাতৃভূমিতে স্বাগত জানিয়েছে।
তবে, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগে পদ পাচ্ছেন ও আগামীতে দেশে এমপি মনোনয়ন চাইছেন, এমন আলোচনা থেকেই ডা. ফেরদৌস দলীয় কোন্দলের শিকার হয়েছেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
যদিও নিজের ফেসবুকে এক পোষ্টে, দেশে এমপি মন্ত্রী হওয়ার ইচ্ছে নেই বলে জানিয়েছেন ডা. ফেরদৌস।
নিউইয়র্ক বাংলাদেশি কমিউনিটি ও বিভিন্ন সূত্র মতে, প্রাণঘাতি করোনা বিপর্যয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিউইয়র্কে মানুষের পাশে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশি এ চিকিৎসক।
মানবতার কল্যাণে বিভিন্ন কাজের কারনে দেশ-বিদেশে ব্যাপক প্রশংসিত হন তিনি। বর্তমানে নিউইয়র্কে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় তিনি মানুষের পাশে দাঁড়াতে দেশে ফেরেন।
৭ জুন রোববার বিকেলে দেশে ফেরে এয়ারপোর্টে হেনস্তার শিকার হন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশি চিকিৎসক খন্দকার ফেরদৌস।
তার করোনা সংক্রমণ নেই মর্মে ডাক্তারি সনদ থাকার পরও তাকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়।
এদিন একটিপক্ষ তাকে বঙ্গবন্ধু’র খুনী খন্দকার মোস্তাকের ভাতিজা ও কর্নেল রশিদের খালাতো ভাই উল্লেখ করে ফেসবুকসহ শোস্যাল মিডিয়ায় প্রচারণা চালায়।
যদিও করোনা দূর্যোগে তিনি দেশের ফেরার খবরে দেশের অসংখ্য মানুষ তাকে স্বাগত জানিয়ে ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে পোষ্ট করেছে।
বঙ্গবন্ধু’র খুনী মোস্তাক ও রশিদের আত্মীয় বলে প্রচারণাকে অপপ্রচার উল্লেখ করেন ডা. ফেরদৌস তার ফেসবুকে পোষ্ট দেন।
এতে তিনি বলেন, “আমার বাড়ি কুমিল্লা, নামের সাথে খন্দকার আছে। তাই হয়তো মোস্তাক-রশিদ গংদের আত্মীয় উপাধি দেয়া হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া হলে হয়তো গোলাম আযমের আত্মীয় বানানো হতো। গোপালগঞ্জ বাড়ি হলে হয়তো বলতো আমি মুফতি হান্নানের আত্মীয়।
যারা এইসব অপবাদ দিচ্ছেন জানিনা তাদের আমি কি ক্ষতি করেছি। আমি যা না, আমারে তা বানিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু আমি যা ছিলাম তা বলছেন না কেন আপনারা ?
১৯৯১ সালের পর চট্রগ্রাম মেডিকেলে শিবির ছাত্রদলের তোপের মুখে ছাত্রলীগের শ্লোগান দিয়েছি। শিবিরের মা’র খেয়ে ক্যাম্পাসও ছাড়তে হয়েছিল।
শিবিরের সাথে যুদ্ধ করে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগকে পুনর্প্রতিষ্ঠিত করেছি। এই বিষয়ে তথ্য নেয়া খুব সহজ। আপনারা চাইলেই খবর নিতে পারেন।
আমরা যখন শিবিরের বিরুদ্ধে ফাইট করেছি তখন আজকের সমালোচকরা কই ছিলেন আমার জানা নাই। বেশি কথা বলতে চাই না।
আমি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলাম। আমার সম্পর্কে যদি এই অপবাদের একটাও প্রমাণ করতে পারে তাহলে যে শাস্তি দিবে আমি তা মাথা পেতে নেবো।
আর যারা অপবাদ দিচ্ছেন তাদের প্রতি কোনো অনুরোধ কিংবা অভিযোগ নাই। শুধু এই টুকু বলবো, নিজের বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন।
আমার সম্মানহানির এই অপচেষ্টার জন্য রোজ হাশরের ময়দানে আপনাদেরকে জবাবদিহি করতে হবে। নিয়তির বিচার অনেক কঠিন।
তিনি আরও বলেন, আমি দেশের মন্ত্রী এমপি কিংবা উচ্চপদে আসীন হতে চাইনি। কোভিড-১৯ নিয়ে গত তিনমাস যুক্তরাষ্ট্রে অমানুষিক পরিশ্রম করেছি।
দেশেও এসেছি দেশের মানুষের কোনো কাজে নিজেকে লাগানো যায় কিনা সেই উদ্দেশ্য নিয়ে। কেউ আমার সেবা না চাইলে আমি আবার যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাবো। আমার জন্মভূমি বাংলাদেশ।
এই দেশের জনগণের ট্যাক্সের টাকায় আমি ডাক্তার হয়েছি। দায়িত্ব বোধ থেকেই বার বার দেশে আসি। মানুষের জন্য কাজ করি। কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থেকে আসি না। ”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানিয়েছে, নিউইয়র্কে করোনায় ইতিবাচক কাজের কারনে বেশ জনপ্রিয় ডা. ফেরদৌস।
সেকারনে দেশে ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগ করা ফেরদৌসকে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের পদে চাইছেন দলের একটি পক্ষ।
বিষয়টি জানাজানি হলে ক্ষুব্দ হয় আরেকটি পক্ষ। যুক্তরাষ্ট্রে আওয়ামী লীগের কোন্দল দীর্ঘদিনের। আওয়ামী লীগের এ কোন্দলের চরম প্রভাব রয়েছে দলের সহযোগী সংগঠনেও।
আওয়ামী লীগের কোন্দলের জেরে নিউইয়র্কে যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগের দু’টি গ্রুপে একাধিকার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
আর দেশে ফেরেই সেই দলীয় কোন্দলের বলি হলেন প্রবাসে দেশের সুনাম কুড়ানো ডা. খন্দকার ফেরদৌস।
নিজস্ব প্রতিবেদক/ঢাকা/এমআর