মারন করোনা ভাইরাসে বেড়েই চলছে মৃত্যুর মিছিল। এ ভাইরাসে রোববার পর্যন্ত বিশ্বের ১৯৯টি দেশের ৭ লক্ষাধিক মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৩৩ হাজার মানুষের । তবুও রহস্য মিলছেনা এ প্রাণঘাতি ভাইরাসের ।
বিশ্বে মানুষের দিন কাটছে উদ্বেগ উৎকন্ঠায়। সবার একটাই প্রশ্ন কবে মিলবে এ রোগের ওষুধ। আর কতো প্রাণ গেলে বের হবে ভ্যাকসিন। কবে এ রোগ থেকে মুক্তি মিলবে মানুষের। কবে জীবন যাত্রা স্বাভাবিকে ফিরবে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিরামহীন গবেষণা করে চলছেন বিজ্ঞানীরা। এখন পর্যন্ত ২০টিরও বেশি ভ্যাকসিন তৈরির কাজ চলছে। কার্যকারিতা এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া জানার জন্য প্রাণীর দেহে পরীক্ষা বাদ দিয়ে সরাসরি মানুষের শরীরে একটি ভ্যাকসিনের প্রয়োগ ইতিমধ্যে হয়েছে।
অন্য বিজ্ঞানীরা প্রাণীর দেহে ভ্যাকসিনের পরীক্ষা চালানোর পর্যায়ে রয়েছেন। চলতি বছরের শেষ দিকে তারা এটি মানব শরীরে পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করতে পারবেন বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। তবে বিজ্ঞানীরা যদি চলতি বছরে একটি ভ্যাকসিন তৈরি করে ফেলেনও তারপরও এটির গণ-উৎপাদনের জন্য আরও অনেক সময় অপেক্ষা করতে হবে।
আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ের আগে কোনও ভ্যাকসিন মানব দেহে প্রয়োগের জন্য প্রস্তুত করা সম্ভব নয়। এসব কিছুই ঘটছে একটি অভূতপূর্ব অনির্ধারিত সময়কে ফ্রেমে বেঁধে। এমনকি নতুন নতুন অ্যাপ্রোচ মাথায় রেখে ভ্যাকসিন তৈরির এই প্রচেষ্টা জারি রয়েছে। তবে ভ্যাকসিন তৈরির সব প্রচেষ্টাই যে সফল হবে তার কোনও নিশ্চয়তাও নেই।
এখানে মনে রাখা দরকার, এখন পর্যন্ত মানবদেহে চার ধরনের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে। এসবের প্রত্যেকটির সঙ্গে কমন সর্দিকাশি জড়িত এবং এর কোনোটিরই ভ্যাকসিন
প্রায় অনিবার্যভাবেই এই ভ্যাকসিন বয়স্কদের জন্য খুব একটা ফলপ্রসূ হবে না। এটা শুধুমাত্র ভ্যাকসিনের কারণে নয়; বরং শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থা এখানে অনেকাংশে দায়ী, যা প্রত্যেক বছর ফ্লুবাহিত রোগের ক্ষেত্রে দেখা যায়।
ধরনের ওষুধ; এমনকি ব্যথানাশক ওষুধেরও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। তবে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ছাড়া পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিনের কী ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে তা জানা প্রায়ই অসম্ভব।
যদি একটি ভ্যাকসিন তৈরিও হয়; তারপর এর উৎপাদন হবে খুবই সীমিত। এক্ষেত্রে একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে অগ্রাধিকারের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে বেশি।
করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করে কিনা তা জানতে চিকিৎসকরা ইতোমধ্যে অ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধগুলো প্রয়োগ শুরু করেছেন। এর ফল যদি নিরাপদ হয়; তাহলে ওষুধ আবিষ্কারে গবেষণার গতি আরও ত্বরাণ্বিত হবে।
করোনা আক্রান্ত দেশগুলোর হাসপাতালে ইতোমধ্যে অ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তা চিকিৎসক ব্রুস অ্যায়িলওয়ার্ড বলেন, এখন কেবলমাত্র একটি ওষুধ রয়েছে; যেটির সত্যিকারের কার্যকারিতা থাকতে পারে বলে আমাদের ধারণা। আর সেটি হলো রেমদেসিভির। ‘ইবোলার ওষুধ হিসেবে এটি তৈরি করা হয়েছিল।
ভ্যাকসিন সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। এটি আবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে ভালো স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা।
আপনি যদি করোনা সংক্রমিত হয়ে থাকেন; অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রে মৃদু উপসর্গ দেখা দেয় এবং বাসায় পূর্ণ-বিশ্রামে এটি থেকে সুস্থ হওয়া সম্ভব। পাশাপাশি প্যারাসিটামল এবং প্রচুর পরিমাণে তরল পান করতে হবে। তবে কিছু রোগীর ক্ষেত্রে গুরুতর অসুস্থতা দেখা দিতে পারে, তাদেরকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হবে।
যেভাবে তৈরী হচ্ছে ভ্যাকসিন: করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরির কাজ একেবারে নতুন এবং কম পরীক্ষিত উপায়ে করা হচ্ছে। এই উপায়টিকে বলা হচ্ছে ‘প্লাগ অ্যান্ড প্লে’। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, ইতোমধ্যে নতুন করোনাভাইরাস, সার্স-কোভ-২’র জেনেটিক কোড জানা গেছে এবং এই ভাইরাস তৈরির একটি অবিকল নকশাও পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
কিছু ভ্যাকসিন বিজ্ঞানী ইতোমধ্যে করোনাভাইরাসের জেনেটিক কোড থেকে কিছু অংশ তুলে নিয়ে তা নিরীহ প্রজাতির ভাইরাসের সঙ্গে রাখছেন। যেখানে নিরীহ প্রজাতির বাগের মাধ্যমে কাউকে সংক্রমণ করতে পারে এই ভাইরাস। এরপর তাত্ত্বিকভাবে সেখানে সংক্রমণের বিরুদ্ধে কিছুটা প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে।
অন্যদিকে, কিছু বিজ্ঞানী করোনাভাইরাসের একেবারে ‘র জেনিটিক কোড’ (ডিএনএ অথবা আরএনএ পদ্ধতির ওপর নির্ভর করে) ব্যবহার করে ভ্যাকসিন তৈরির কাজ করছেন। যা একবার মানবদেহে প্রয়োগ করা হলে তা ভাইরাল প্রোটিন উৎপাদনের কাজ শুরু করবে। ফলে এর মাধ্যমে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা আবারও করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে শিখবে। বহুল প্রতীক্ষিত এই ভ্যাকসিন কবে আলোর মুখ দেখবে এখন সেদিকে চেয়ে আছে বিশ্বের কোটি প্রাণ।
খবর: প্রবাস সময় ডেস্ক
” ”> ” ”>