মারন করোনার সংক্রমণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রাণ হারিয়েছে ৫৩জন প্রবাসী বাংলাদেশি। ৩১মার্চ মঙ্গেলবার পর্যন্ত এ মৃত্যুর থবর নিশ্চিত হওয়া গেছে।
বাংলাদেশি কমিউনিটি ও গণমাধ্যম এবং দূতাবাস এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। এ তথ্য মতে, কেবল যুক্তরাষ্ট্রেই মৃত্যু হয়েছে ৩২ বাংলাদেশির।
এছাড়া বৃটেনে ১১, ইতালিতে ২, কাতারে ২, সৌদি আরবে ২, স্পেনে ১, সুইডেনে ১, লিবিয়ায় ১ এবং গাম্বিয়ায় ১ জন বাংলাদেশির মৃত্যুর খবর বেরিয়েছে।
নিউইয়র্ক: নিউইয়র্কে ৩২ জন বাংলাদেশি মারা গেছেন। কনসাল জেনারেল ডা. সাদিয়া ফয়জুন্নেছা বলেন, নিউইয়র্কে এমন পরিস্থিতি হাসপাতালে যাওয়ার মত অবস্থা নেই। সরকারীভাবে কোন তথ্য সরবরাহ করা হয়না বা চাওয়া যায় না। তবে দেশের কমিউনিটি থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
মিশন জরুরি যোগাযোগে একটি চিকিৎসক-পুল তৈরি করেছে, যেখানে ঘরে বসে বাংলাদেশিরা চিকিতসকের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন এবং আতঙ্কিত না হয়ে চিকিতসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পারবেন।
সোমবার স্থানীয় সময় সকালে নিউইয়র্কে চিকিতসাধীন অবস্থায় মারা যান প্রবাসী ফটো সাংবাদিক এ হাই স্বপন। শারীরিক নানা জটিলতায় ভোগা স্বপন করোনায় আক্রান্ত হয়ে কুইন্সের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। তাছাড়া গত দু’দিনে যারা মারা গেছেন তার অন্যতম আইটি প্রফেশনাল মির্জা নুরুল হুদা (৪৪), মোহাম্মদ আনিসুর রহমান (৭৬), জায়েদ আলম (৪৫), মোতাব্বির চৌধুরী (৬৮), বিজিত কুমার সাহা (৩৮), মোহাম্মদ শিপন মোসেন (৫৬) শফিকুর রহমান মজুমদার ও কাজী কায়কোবাদ, মিশিগানের ডেট্রয়েট সিটিতে একজন ও নিউজার্সির প্যাটারসনে একজন বাংলাদেশি নারী করোনায় মারা গেছেন। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত মোট ৩২জননের মৃত্যু হয়।
লন্ডন: যুক্তরাষ্ট্রের পর করোনায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের মারা যাওয়ার তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে বৃটেন। দেশটিতে সোমবার পর্যন্ত ১১ বাংলাদেশি মারা গেছেন। এর মধ্যে ১০জনই লন্ডনে। একজন বার্মিংহামে। বৃটেনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার আশিকুন নবী চৌধুরী জানান, গত ২৪ ঘন্টায় বৃটেনের করোনায় ৩৯৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আশার দিক হচ্ছে ওই তালিকায় কোনো বাংলাদেশে নেই। সোমবার পর্যন্ত ১১ বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত মারা গেছেন মর্মে কমিউনিটি সূত্রে মিশন নিশ্চিত হয়েছে এবং ঢাকায় রিপোর্ট পাঠিয়েছে বলে জানা গেছে।
কাতার: দোহায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমেদ রাতে জানান, কাতারে আবুল কাশেম (৫৮) নামের আরেক প্রবাসীর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার মারা গেছেন। তার বাড়ি গাজীপুরের কালিয়াকৈরে। এর আগে গত ২৩ শে মার্চ দীপক কুমার (৫৭) নামের একজন মারা যান। তার বাড়ি শ্রীমঙ্গলে।
ইতালি: এদিকে মিলানের বাংলাদেশ কনস্যুলেট জানিয়েছেন, ইতালিতে এক জন বাংলাদেশি মারা গেছেন। তার অবশ্য করোনা ধরা পড়ার আগে থেকে অন্য জটিলতাও ছিলো। মিশন বলছে সোমবার অারেক বাংলাদেশি মারা যাওয়ার খবর মিলেছে। মিলান, বেরগামো, ব্রেসিয়াসহ বৃহত্তর লোম্বাদিয়া, ভারেজে, তরিনো, রোমসহ বিভিন্ন শহরে আক্রান্ত বাংলাদেশির সংখ্যাও উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধির খবর এসেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যা বলছে, বিদেশে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া বাংলাদেশিদের সংখ্যা প্রায় অর্ধ শত পার হলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করোনা সেল এখনও ৬ জনের মৃত্যুর তথ্য জানাচ্ছে।
সেলে প্রধান অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব ডা. খলিলুর রহমান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় আইনে চিকিৎসাধীন কিংবা মারা যাওয়া ব্যক্তির পরিবার ছাড়া অন্যদের তথ্য শেয়ার করা বারণ। ফলে সেখান থেকে সরকারিভাবে তথ্য পাওয়ার সূযোগ নেই। ইতালিতে ১ জন, স্পেনে ১, কাতারে ২ জন এবং সুইডেনে ১জন- এই ৬ বাংলাদশির মৃত্যুর বিষয়টি আমরা সরকারি বা আনুষ্ঠানিকভাবে বলছি।
তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করোনা বিষয়ক ফোকাল পয়েন্ট ডা. খলিল বিশ্বের দেশে দেশে বাংলাদেশিদের উদ্বেগজনক হারে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন।
বলেন, নানা সূত্রে আমরাও তথ্য পাচ্ছি, কেবল যুক্তরাষ্ট্রেই শতাধিক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বা অভিবাসীদের আক্রান্তের হারও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, সব মিলে দেশের বাইরে ২ শতাধিক বাংলাদেশিরর করোনা শনাক্ত হয়েছে মর্মে আমরা তথ্য পেয়েছি। যার মধ্যে ইতালিতে ৪০, স্পেনে ২৩, সিঙ্গাপুরে ১৪ জনের করোনা আক্রান্ত চিকিতসা নিয়েছেন বা নিচ্ছেন। এদিকে কানাডা মিশন বলছে, দেশটিতে ২০ জনের মতো বাংলাদেশি আক্রান্ত হয়েছেন।
এদিকে সৌদি আরবের মদিনায় মঙ্গলবার মারা যাওয়া বাংলাদেশি চিকিতসক আশফাক হোসাইন ঝিনাইদহ ক্যাডেট ও সলিমুল্লাহ মেডিকেলে প্রাক্তন ছাত্র বলে জানা গেছে। এর আগে ২৪শে মার্চ মদীনায় করোনা আক্রান্ত প্রথম বাংলাদেশির মৃত্যু হয়। তার বাড়ি সাভারে।
উল্লেখ্য, ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে চীনের উহান শহরে ধরা পড়ে নোভেল করোনা ভাইরাস। এর পর বিশ্বজুড়ে এটি ছড়িয়ে পড়ে। এ ভাইরাসে এ পর্যন্ত ৮লাখ ২৬ হাজার ২২২মানুষ আক্রান্ত হয়। মৃত্যু হয় ৪০ হাজার ৪১০ জনের। সুস্থ হয় ১ লাখ ৭৪ হাজার ১১৪জন।
প্রবাস সময়/ নিউজ ডেস্ক/ ” ”> ” ”>