বন্ধ হোক ধানকাটা নামে ‘তামাশা’

প্রকাশঃ

আবুল কালাম আজাদঃ সামাজিক সুরক্ষা না মেনে, ধানকাটা কর্মসূচিতে অংশ নেন দুই মন্ত্রীসহ চার সংসদ সদস্য। সঙ্গে ছিলেন বেশ কয়েকজন নেতা, সরকারি উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও একদল কর্মী।

ঘটনাটি ২৯ এপ্রিল বুধবারের। সুনামগঞ্জের দক্ষিন সুনামগঞ্জ উপজেলায়। অথচ, এখন পর্যন্ত ওই উপজেলায় ৪ জন করোনারোগী রয়েছেন। আর জেলায় রয়েছেন মোট ১৯ জন।

গণমাধ্যম ও সোশাল মিডিয়ার কল্যাণে, সুনামগঞ্জ ছাড়াও এমন চিত্র দেখা গেছে দেশের বেশ কয়েকটি স্থানে।
পায়ে জুতা আর স্যুট কোট ঝলমলে পোষাক কিংবা সফেদ পায়জানা পাঞ্জাবিতে আবৃত দেহে ধানক্ষেতে নেতা। সঙ্গে দলবাঁধা তার অনুসারী চেলাপেলা। সবার মুখে হাসি, বাঁধভাঙ্গা! এ যেন কোন মেলার আসর মিলেছে ফসলের মাঠে।

প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসে সরকারের দেওয়া সামাজিক সুরক্ষা নির্দেশনা মানছেন না, খোদ সরকারি দলের ওইসব নেতাকর্মীরা।

এক মুঠো ধান কেটে ফসলের মাঠ ছাড়ার আগেই, ফেসবুকসহ সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হয় নেতার ধান কাটার ‘মহৎ’ এ ছবি।

এমন কয়েকটি ঘটনার ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হলে, এটাকে লোক দেখানো বলে মন্তব্য করে চলছে সমালোচনা। অনেকে এটাকে বলছেন, ধানের চেয়ে ঢোল পিটানো মানুষ বেশি। এবং সস্তা জনপ্রিয়তা পেতে এমনটি করা হচ্ছে।

যদিও শুরুতে শ্রমিক সঙ্কটে, কয়েকটি স্থানে কৃষকদের ধান কেটে প্রশংসিত হন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

সম্প্রতি কৃষকের ধান কেটে দিতে নেতাকর্মীদের ‘উৎসাহ’ দেওয়ার জন্য এক মুঠো ধান কেটে দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন টাংগাইল দুই আসনের এমপি তানভির হাসান।


কর্মীরা এমন ‘উৎসাহ’ নিয়ে সামাজিক সুরক্ষা না মেনে ধান কাটতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত ও করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার ছবি অধিকাংশে দেখা গেছে, সামাজিক সুরক্ষা মানার বালাই নেই। এমনও অভিযোগ উঠেছে, কয়েকস্থানে ধান কাটার ছবি তোলার পর কিংবা ২/৩ আঁটি কাটার পর চলে গেছেন এই কৃষকের ‘বন্ধু’ রাজনৈতিক কর্মীরা।

সরকারের তথ্যমতে, ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত প্রাণঘাতি করোনায় ১৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন ৭ হাজার ৩০১ জন। সামনে আরও কঠিন পরিস্থিতি ও নিষ্ঠুর পরিনতির ইঙ্গিত দিয়েছেন বিশেজ্ঞরা।

ধান ঘরে তুলে নিতে কৃষকদের জন্য লকডাউন শিথিল রাখার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কৃষকদের ধান ঘরে তুলে নিতে প্রধানমন্ত্রীর এমন নির্দেশনা যথেষ্ট মনে করছেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা।

এজন্য দরকার, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের আন্তরিকতার। প্রতিটি জেলা-উপজেলায় শ্রমিকদের মাঝে সচেতনা বৃদ্ধি ও তাদের মধ্যে সামাজিক সুরক্ষা সরঞ্জামের ব্যবস্থা করা। যেসব এলাকায় শ্রমিক সঙ্কট রয়েছে, সেখানে শ্রমিকদের জন্য যানবাহনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।

এ মহামারীতে, সদ্য রাজনীতির মাঠে নামা ক্রিকেটার মাশরাফিও হতে পারেন দৃষ্টান্ত। তিনি তার এলাকায় করোনা প্রতিরোধে নানা ব্যবস্থা গ্রহন এবং কৃষকদের ফসল ঘরে তোলার জন্য কম্বাইন হারভেষ্টার ও রিপার মেশিনের ব্যবস্থা করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন।

রাস্তার পাশে কোটি টাকার গাড়ি থামিয়ে, কৃষকের হাতের কাস্তে নিয়ে মন্ত্রী মশাইয়ের একমুঠো ধান কাটা ডিজিটাল সময়ে বোকার স্বর্গে বাসের মতোই।

কৃষকদের কাজ কৃষকরাই করুক। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চাষীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হোক। যথাসময়ে ধান ঘরে তুলতে জনপ্রতিনিধিরা চাষীদের পাশে থাকুক, পথ দেখানো নাবিক হয়ে।

ধান কাটার নামে ফটোসেশন বন্ধ হোক। বন্ধ হোক, দেশের সোনার মানুষ কৃষকদের সঙ্গে তামাশা। বন্ধ হোক, সামাজিক সুরক্ষা না মানার এ করোনা ‘উৎসব’।

আবুল কালাম আজাদ। সম্পাদক, প্রবাস সময়।

” ”> ” ”>

সর্বশেষ খবর

সৌদিতে ভবনের ছাদ থেকে পড়ে বাংলাদেশি যুবকের মৃত্যু

0
  সৌদি আরবে কাজ করার সময় ভবনের ৩য় তলার ছাদ থেকে পড়ে মো. ইউছুপ (২৬) নামে এক যুবকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। বৃহম্পতিবার (৫ অক্টোবর) এ...

জনপ্রিয় খবর