বাসা পছন্দ হলেই সংসার করে বাবুই পাখি !

প্রকাশঃ

লক্ষ্মীপুর: শিল্পী, স্থপতি এবং সামাজিক বন্ধনের প্রতিচ্ছবি বাবুই পাখি। নিপূণভাবে বুনা তাদের বাসাগুলো অনেক মজবুত হয়। তাদের বাসাগুলো টেকসই উন্নয়নের প্রতিচ্ছবিও বটে। কারণ শক্তবুননের এ বাসা টেনেও ছেঁড়া কঠিন কাজ। বাসা তৈরীর শুরুর দিকেই স্ত্রী বাবুই সঙ্গী খোঁজেন পুরুষ বাবুই পাখি।

বাসা দেখে পছন্দ হলেই প্রেমে পড়েন, এবং সংসার বাঁধেন স্ত্রী বাবুই। স্ত্রী বাবুইয়ের বাসা পছন্দ হলে বাকিটা শেষ করতে পুরুষ বাবুইয়ের সময় লাগে মাত্র চার দিন। কারণ তখন পুরুষ বাবুই মহাআনন্দে বিরামহীন কাজ করে। স্ত্রী বাবুই পাখির প্রেরণা পেয়ে পুরুষ বাবুই খুবই শিল্পসম্মত নিপূণভাবে বাসা তৈরি করে। বাবুই পাখির বাসা নিয়ে এমন গল্প রয়েছে।

তবে একসময় এ বাসা অহরহ থাকলেও এখন আর চোখে পড়ে না। নানা কারনে হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা। তাইতো কবি রজনীকান্ত সেনের কালজয়ী স্বাধীনতার সুখ ছড়াটিতে বাবুই পাখির পরিশ্রম আর এক নিদারুণ শিল্পের প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠে। এছাড়াও গ্রামবাংলায় ‘তাঁতী’ পাখি হিসেবেও বাবুই’র পরিচিতি রয়েছে।

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের চরবংশী গ্রামের একটি তালগাছের পাতায় বাসা বুনতে দেখা যায় বাবুই পাখিকে।

খড়ের ফালি, ধানের পাতা, তালের কচিপাতা, ঝাউ ও কাশবনের লতাপাতা দিয়ে উঁচু তালগাছে চমৎকার বাসা তৈরির কারিগর বাবুই পাখি। একসময় গ্রামবাংলার প্রতিটি তালগাছেই তাদের দৃষ্টিনন্দন বাসাগুলো বেশি দেখা যেত।

প্রবল ঝড়েও টিকে থাকে তাদের বাসা। একটি তালগাছে অনেকগুলো বাসা দেখা যেত। কিন্তু কালের বিবর্তনে এখন তালগাছের সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখির বাসা। একই সঙ্গে বিলুপ্তির পথে পাখিটিও।

জানা গেছে, পুরুষ বাবুই এক বাসা থেকে আরেক বাসায় পছন্দের সঙ্গী খুঁজতে যায়। পছন্দ হলেই স্ত্রী বাবুইকে সাথী বানানোর জন্য কত কিছুই না করে। স্ত্রী বাবুইকে নিজের প্রতি আকর্ষণ করার জন্য খাল-বিল ও ডোবায় গোসল সেরে ফূর্তিতে নেচে বেড়ায় গাছের ডালে ডালে।

এরপর উঁচু তাল, নারিকেল বা সুপারি গাছের ডালে বাসা তৈরির কাজ শুরু করে পুরুষ বাবুই। বাসা তৈরির অর্ধেক কাজ হলে কাঙ্খিত স্ত্রী বাবুইকে ডেকে সেই বাসা দেখায়। বাসা পছন্দ হলেই সম্পর্ক গড়ে উঠে। স্ত্রী বাবুই পাখির বাসা পছন্দ হলে বাকিটা শেষ করতে পুরুষ বাবুইয়ের সময় লাগে চার দিন। কারণ তখন পুরুষ বাবুই মহাআনন্দে বিরামহীন কাজ করে। স্ত্রী বাবুই পাখির প্রেরণা পেয়ে পুরুষ বাবুই খুবই শিল্পসম্মত নিপূণভাবে বাসা তৈরি করে।

বাসার ধরন, বাবুই পাখির বাসা উল্টানো কলসীর মত দেখতে। বাসা বানাবার জন্য বাবুই খুব পরিশ্রম করে। ঠোঁট দিয়ে ঘাসের আস্তরণ সারায়। যত্ন করে পেট দিয়ে ঘষে (পালিশ করে) গোল অবয়ব মসৃণ করে। শুরুতে দুটি নিম্নমুখী গর্ত থাকে। পরে একদিক বন্ধ করে ডিম রাখার জায়গা হয়।

অন্যদিকটি লম্বা করে প্রবেশ ও প্রস্থান পথ হয়। রাতের বেলায় ঘর আলোকিত করার জন্য এরা জোনাকি পোকা ধরে নিয়ে বাসায় রাখে এবং সকাল হলে আবার তাদের ছেড়ে দেয়।

জানা গেছে, বাবুই দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও পাকিস্তান ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও দেখা যায় না। বাবুই সাধারণত ৩ প্রজাতির হয়ে থাকে, ১। দেশি বাবুই ২। দাগি বাবুই ৩। বাংলা বাবুই। এদের মধ্যে বাংলা ও দাগি বাবুই’র প্রজাতি বিলুপ্তির পথে।

তবে দেশি বাবুই এখনো দেশের সব গ্রামের তাল, নারিকেল, খেজুর, রেইনট্রি গাছে দলবেঁধে বাসা বোনে। এরা সাধারণত মানুষের কাছাকাছি বসবাস করে। এদের বাসা মানুষের হাতের নাগালের মাত্র পাঁচ অথবা ছয় ফুট উপরে দেখা যায়।

এতে অসচেতন মানুষগুলো বাসাগুলো ভেঙে ফেলে।এছাড়াও রয়েছে পরিবেশ বিপর্যয়। একারণেই পাখিটির সংখ্যা রহস্যজনকভাবে কমে যাচ্ছে।

দক্ষিণ চরবংশী গ্রামের যুবক রাকিবুল হাসান তামিম জানান, তাদের এলাকায় প্রায় ১৫-২০টি তাল গাছ রয়েছে। গত ৩-৪ বছর ধরে বাবুই পাখির কোন বাসা দেখা যায়নি। তবে এরআগে প্রায় প্রত্যেকটি তালগাছেই পাখির বাসা দেখা যেত।

নিজস্ব প্রতিনিধি/লক্ষ্মীপুর/এমআর

সর্বশেষ খবর

সৌদিতে ভবনের ছাদ থেকে পড়ে বাংলাদেশি যুবকের মৃত্যু

0
  সৌদি আরবে কাজ করার সময় ভবনের ৩য় তলার ছাদ থেকে পড়ে মো. ইউছুপ (২৬) নামে এক যুবকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। বৃহম্পতিবার (৫ অক্টোবর) এ...

জনপ্রিয় খবর