লক্ষ্মীপুর: ভাগ্য পরিবর্তনে সৌদি আরবে যান লক্ষ্মীপুরের জায়েদ ও কুমিল্লার নজরুল। কিন্তু কর্মস্থলেই থেমে যায় তাদের জীবন। এরপর থেকেই সেদেশের মর্গে পড়ে আছে এ দুই হতভাগা রেমিটেন্স যোদ্ধার মৃতদেহ। আর দেশে থাকা তাদের পরিবারের সদস্যরা আহাজারি করছে মৃতদেহ কাছে পাবার।
সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে পৃথক দুই পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করেও কোন কাজ হচ্ছে না বলে জানায় স্বজনেররা। দুই দুইবার মৃতদেহ দেশে আসার তারিখ নির্ধারণ হয়েও আর আসেনি। বিদেশের মাটিতে মৃত্যুর প্রায় সাড়ে ৫ মাসেও লাশ দেশে না আসায় হতাশ তারা।
সৌদিতে দুর্ঘনায় নিহত জায়দের বাড়ি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের নন্দীগ্রামে। তার পিতার নাম ইউসুফ। বয়স ছিল ২৬। পাসপোর্ট নম্বর- বিএম ০৮৭৯৪৫৮। মো. নজরুল হকের বাড়ি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার দরবেশপুর গ্রামের আশাদিয়া গ্রামে। তার পিতা মোহাম্মদ আলী আহম্মদ। পাসপোর্ট নম্বর- বিএন ০৬৭২৫৯৯।
নিহত জায়দের স্বজনরা জানায়, জায়েদ শ্রমিক ভিসায় ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারী সৌদি আরবে যান। সেখানে একটি পানি সাপ্লাইয়ের কোম্পানিতে কাজ করতেন তিনি। চলতি বছরের ২৩ মে সৌদি আরবের জেদ্দায় ম্যানহোলে পানির পাইপ লাইনে কাজ করতে গিয়ে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে জায়েদ এবং তার সহকর্মী নজরুল হকের মৃত্যু হয়। পরবর্তীতে অন্য সহকর্মীরা জানতে পেরে তাদের মৃতদেহ উদ্ধার করে। মৃতদেহগুলো প্রায় সাড়ে ৫ মাস ধরে সে দেশের জার্মান হাসপাতালের মর্গে রয়েছে।
জায়েদের ভাই রবিউল আউয়াল বলেন, আমার ভাইয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে আমরা সে দেশের কম্পানি এবং আমাদের লোকজনের সাথে যোগাযোগ করি। তারা বলছে- মৃতদেহ ফ্রিজে রাখা আছে। পরবর্তীতে এ্যাম্বাসিতে ফোন দিয়ে সেখানে সহযোগীতা চাই। সেখান থেকে সহযোগীতা করার কথা বললেও এখন আর কোন সহযোগিতা পাচ্ছি না। আমাদেরকে পাত্তাই দেয় না এ্যাম্বাসির লোকজন। আমার ভাইয়ের লাশ ফিরে পেতে আমি সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।
বলেন, লাশ দিবে বলে দুই কার্গো বিমানের টিকেট পাঠিয়েছে। কিন্তু লাশ আসেনি। ধারদেনা করে ভাইকে সৌদি পাঠিয়েছি। সে এখন লাশ হয়ে হাসাপাতালের ফ্রিজে পড়ে আছে। আমাদের পরিবারের লোকজন তার মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছে। লাশ না পেয়ে আরও বেশি হতাশ আমরা। লাশটা পেলে অন্তত মাটি দিয়ে শান্তনা নিতাম।
জায়েদের বাবা ইউসুফ প্যারালাইসিজে আক্রান্ত হয়ে বাকপ্রতিবন্ধী হয়ে পড়েছেন। কথা বলতে না পারলেও ছেলের মৃত্যুতে কেঁদে চোখ ভিজাচ্ছেন। ছেলে জায়েদের কথা জিজ্ঞেস করলেই হাউমাউ করে কান্নাকাটি করেন তিনি।
জায়েদের বোন মারজাহান আক্তার ভাইয়ের কথা মনে পড়ে বার বার মুর্চা যাচ্ছেন। তিনি বলেন, আমার ছোট ভাই। অনেক সখ করে তাকে বিদেশে পাঠিয়েছি। দেশে ছুটিতে এসে সে বিয়ে করবে। বিদেশ যাবার সাড়ে তিন বছরের মাথায় সে লাশ হয়ে পড়ে রইল। তার লাশটাও বুঝি আমরা পাবো না?
তিনি আরও বলেন, আমার ভাই জায়েদ এবং কুমিল্লার নজরুল হক ম্যানহোলে কাজ করতে নামে। প্রথমে নজরুল নামে, জায়েদ উপরে থাকে। নজরুল নামার সাথে সাথে সে অজ্ঞান হয়ে যায়। তাকে তুলে আনতে গিয়েই আমার ভাইয়েরও প্রাণ যায়।
জায়েদের মা খুকি বেগম বলেন, আমার ছেলেকে হারিয়েছি। তার লাশের আশায় পথ চেয়ে আছি। লাশটা পেলে বুকে জড়িয়ে কাঁদতাম। কবরের পাশে গিয়ে কাঁদতাম।
লক্ষ্মীপুরের বশিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. নোমান হোসেন দুলাল বলেন, জায়দের মৃত্যুর পর তার সকল কাগজপত্র আমরা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তৈরী করে দিই। সেগুলো সৌদিতে পাঠানো হয়েছে। মৃতদেহ দেশে পাঠানোর কথা বলতেছে, কিন্তু পাঠায়নি। আমি দেশের সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানাবো, যাতে দ্রুত জায়েদের মৃতদেহ দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
প্রবাস সময়/ এমআর