লক্ষ্মীপুর :মরণব্যাধি করোনা ভাইরাসে থমকে গেছে লক্ষ্মীপুরসহ সারাদেশ। এর ভয়াবহতায় সরকার প্রধান শেখ হাসিনা অসহায় জনগণের পাশে থাকার জন্য জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু সহযোগীতায় না এসে গা ঢাকা দিয়েছেন লক্ষ্মীপুরের অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি।
এরমধ্যে সংসদ সদস্য, পৌরসভার মেয়র, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিরা রয়েছেন।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অমান্য করে অনেক জনপ্রতিনিধি জনগণের সহযোগীতায় এগিয়ে না এসে গা ঢাকা দিয়েছেন।
লক্ষ্মীপুরসহ সারাদেশে স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে সেসব প্রতিনিধিদের তথ্য সংগ্রহ করছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি সংস্থা। ওই গোয়েন্দা সংস্থাটি এ সংকটে গা ঢাকা দেওয়া জনপ্রতিনিধিদের তালিকা করছেন ।
এদিকে ৩১ মার্চ সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা লক্ষ্মীপুরে এ দূর্যোগে জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা মাঠ পর্যায় থেকে নিরুপন করেছেন। ইতিমধ্যে তারা সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। একই সঙ্গে জনগণকে সহযোগীতা না করে গা ঢাকা দেওয়ায় জনপ্রতিনিধিদের তালিকাও করছেন।
সম্প্রতি কয়েকটি গণমাধ্যমে করোনা সংকটে লক্ষ্মীপুরে অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি গা ঢাকা দেওয়ার সংবাদ প্রকাশ হয়। এতে অনেকেই শুধু চেহারা দেখানোর জন ফেসবুকে ভেসে উঠেছেন বলে লোকজন বলাবলি করছেন।
অনেক জনপ্রতিনিধদের করোনা রোধে সচেতনতা সৃষ্টি, প্রচার-প্রচারণা বৃদ্ধি ও খাদ্য সহায়তায় কোন সক্রিয় ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি। এদিকে অনেক জনপ্রতিনিধি সরকারি খাদ্য সহায়তা জনগণকে দিয়ে নিজের নামে চালিয়ে দিচ্ছেন।
অন্যদিকে লক্ষ্মীপুরের ৪ টি সংসদীয় এলাকায় ৪ জন সংসদ সদস্য (এমপি) থাকলেও তারা এ সংকটময় সময়ে এলাকাছাড়া। একবারের জন্যও এমপি একেএম শাহজাহান কামাল, আবদুল মান্নান, আনোয়ার হোসেন খান ও কাজী শহীদ ইসলাম পাপুল এলাকায় আসেননি। এরমধ্যে পাপুল এমপি কোন দেশে আছেন তা বলা মুশকিল। তবে তাদের পক্ষ থেকে কয়েকদিন প্রতিনিধিরা এলাকায় মাস্ক, লিফলেটসহ কিছু সরঞ্জাম বিতরণ করছেন।
লক্ষ্মীপুরে শাহজাহান কামাল এমপির প্রতিনিধি বায়েজীদ ভূঁইয়া প্রায় দুই হাজার শ্রমজীবির বাড়ি গিয়ে খাদ্য পৌঁছে দিয়েছেন।
লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান সদর, রায়পুর ও রামগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় পরিষদের সদস্যদের নিয়ে কর্মহীন মানুষের খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন। চেয়ারম্যান ও কয়েকজন সদস্য এক মাসের সম্মানি ত্রাণ সহায়তার জন্য তহবিলে জমা দিয়েছেন।
অন্যদিকে জেলার ৫৮ টি ইউনিয়নের মধ্যে প্রায় ১৮ জন চেয়ারম্যান করোনা সচেতনতায় শুরু থেকে সক্রিয়ভাবে মাঠে কাজ করছেন। অন্যরা যেন ঘুমে রয়েছেন। ৩ টি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, ৪ টি পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলদের অধিকাংশ গাছাড়া ভাব নিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে ।
এদেরমধ্যে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার মেয়র আবু তাহের, সদরের উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম সালাহ উদ্দিন টিপু, কমলনগর উপজেলা চেয়ারম্যান মেজবাহ উদ্দিন আহম্মেদ বাপ্পি ও রায়পুরের ভাইস চেয়ারম্যান এ বি এম মারুফ বিন জাকারিয়া করোনা নিয়ে হাট-বাজার, বাসা-বাড়িতে প্রচার-প্রচারণা করছেন। তারা সরকারি বরাদ্দের পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগে অসহায়দের চাল, ডাল, আলুসহ খাদ্য সামগ্রী দিয়েছেন।
লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সদর উপজেলার চররুহিতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কবির পাটওয়ারী, উত্তর হামছাদির চেয়ারম্যান এমরান হোসেন নান্নু, লাহারকান্দির চেয়ারম্যান মোশারেফ হোসেন মুশু পাটওয়ারী, চন্দ্রগঞ্জের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বাবুল, তেওয়ারীগঞ্জের চেয়ারম্যান ওমর হোসাইন ভুলু, কমলনগর উপজেলার তোরাবগঞ্জের চেয়ারম্যান ফয়সাল আহমেদ রতন, উত্তরজয়পুরের চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন, চরকাদিরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ, রামগতির বড়খেরির চেয়ারম্যান হাসান মাকছুদ মিজানসহ ১৮ জন শুরু থেকেই করোনা প্রতিরোধে কাজ করছেন।
রায়পুরে ১০ জনসহ রামগঞ্জ, সদর, রামগতি ও কমলনগরের মোট ৪০ জন ইউপি চেয়ারম্যানরা রহস্যজনক ভূমিকায় রয়েছে। নিয়ম রক্ষার কাজ করে দায় সারছেন তারা। করোনা রোধে প্রচার-প্রচারণাও চালানো হয়নি অনেক ইউনিয়নে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার লক্ষ্মীপুরে কর্মরত একজন সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, তৃণমূল পর্যায়ে জনপ্রতিনিধিরা এখন জনগনকে সতর্ক করে সাহসী ভূমিকা রাখার কথা। কিন্তু তারা গা ছাড়া মনোভাব নিয়ে করোনা সংকটে শুরু থেকে রহস্যজনক ভূমিকায় আছে।
উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে ওইসব জনপ্রতিনিধিদের তালিকা হচ্ছে। ইতোমধ্যে তাদের কার কি ভূমিকা ছিল, তা নিয়ে প্রতিবেদন হয়েছে। সার্বক্ষনিক গুরুত্ব দিয়ে করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন চলছে।
কাজল কায়েস, বিশেষ প্রতিনিধি/লক্ষ্মীপুর