মো. নিজাম উদ্দিন: লক্ষ্মীপুরে নবম শ্রেণীর ছাত্রী হিরামনিকে ধর্ষণ করে হত্যার ঘটনায় থানায় মামলা করেছেন তার মা ফাতেমা বেগম। এতে অজ্ঞাতনামাদের আসামী করা হয়েছে। ঘটনার পর পরই অপরাধীদের ধরতে মাঠে নেমেছে পুলিশের একাধিক টিম।
তবে ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পার হলেও শনিবার (১৩ জুন) দুপুর পর্যন্ত রহস্য উৎঘাটনের বিষয়ে কিছু জানাতে পারেনি পুলিশ।
পুলিশ বলছে, দ্রুতই রহস্য উদঘাটন করা হবে।
অন্যদিকে নিহতের পরিবার, আত্মীয়-স্বজন এবং এলাকাবাসীসহ তার বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা দ্রুত রহস্য উদঘাটনের দাবি জানিয়েছেন। জঘন্যতম এ হত্যাকান্ডের বিচারের দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও সবর হয়েছেন জেলার বাসিন্দারা।
শনিবার (১৩ জুন) সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন জেলা পুলিশ সুপার ড. এএইচএম কামরুজ্জামান। এ সময় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর সদস্যরাও তাঁর সাথে ছিলেন। তাঁরা পরিবারের সদস্যসহ আশপাশের লোকজনের সাথে কথা বলেন। এসপি কামরুজ্জামান সান্তনা দেন পরিবারের সদস্যদের। আশস্ত করেন বিচার পাবার।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ঘটনার বিষয়ে সাংবাদিকদের এসপি এএইচএম কামরুজ্জামান জানান, পরিবারের পক্ষ থেকে শুক্রবার রতেই হত্যা ও ধর্ষণের ধারায় থানায় মামলা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘হত্যাকারীকে চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। গোয়েন্দা পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক টিম এ রহস্য উদঘাটনে কাজ করে যাচ্ছে। দ্রুতই হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করা হবে। ঘটনার সাথে জড়িত যে-ই হোক, তাকে রেব করে আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনার পর পরই যে দুই জনকে আটক করা হয়েছে, তাদেরকে পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আমরা ওদের কাছ থেকে এতটুকু তথ্য পেয়েছি এ মেয়েটির একটি ছেলের সাথে কিছুটা আন্ডারেস্টিং ছিলো। সে বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি আসলে তাদের বক্তব্য সঠিক কিনা। এবং যে ছেলেটার কথা বলছে তাকে খুঁজে পেলে জানতে পারবো কি কারণে এ ঘটনাটা ঘটেছে।’
পুলিশ সুপার বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, হত্যার পূর্বে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। বাকীটা পোষ্টমটেম (ময়নাতদন্ত) রিপোর্টে জানা যাবে।’
ঘটনার সাথে কতজন জড়িত এমন প্রশ্নে এসপি বলেন, ‘এটা তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে ঘটনার সাথে কতজন জড়িত ছিলো।’
এদিকে, হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে ফাঁসির দাবি জানিয়েছে পালেরহাট পাবলিক হাইস্কুলের প্রাক্তণ ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। ওই বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীতে পড়ালেখা করতো হিরামনি। শনিবার সকাল ১১ টায় বিদ্যালয়ে প্রাঙ্গণে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। তবে পুলিশি বাধার মুখে আয়োজনটি সম্পন্ন করতে পারেননি তারা।
আয়োজকদের দাবি, পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের মানববন্ধন করতে নিষেধ করা হয়েছে। ফলে তারা ১০ মিনিটের মধ্যে মানববন্ধটি গুটিয়ে নেয়।
গণমাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যে বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি নাজমুল করিম টিপু বলেন, ‘পুলিশের নির্দেশে আমরা মানববন্ধন স্থগিত করেছি। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জড়িতদের গ্রেফতার করতে আমরা পুলিশকে আল্টিমেটাম দিয়েছি। তা না হলে আমরা বিক্ষোভ কর্মসুচি পালন করবো।’
এ ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপার কামরুজ্জামান জানান, এ বিষয়টি তাঁর নলেজে নেই।
নিহতের মাতা ফাতেমা বেগম জানান, তার ১৪ বছরের কিশোরী মেয়েকে নয়ন নামে স্থানীয় এক বখাটে ছেলে উত্যক্ত করতো। বিষয়টি বেশ কয়েকবার নয়নের পরিবারকে জনিয়েছেন এবং নয়নকে বুঝিয়েছেন তার মেয়েকে যেন উত্যক্ত না করতে। তিনি মেয়ের হত্যাকারীদের বিচার দাবি করেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিচার দাবি
শুক্রবার বিকেল থেকে হিরামনিকে ধর্ষণ এবং হত্যার খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হতে থাকে। এ সময় ফেসবুকে তার হত্যার বিচার জানিয়ে বিভিন্ন পোষ্ট দেওয়া হয়। এ ঘটনায় হিরামনির প্রতীকি ছবি পোষ্ট করে অনেকে। হত্যাকারীদের দ্রুত খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানান ফেজবুক ব্যবহারকারীরা।
ন্যাক্কারজনক এ ঘটনা বিচারের দাবি জানিয়েছেন হিরামনির স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. বেলায়েত হোসেন খাঁন। তিনি বলেন, ‘ধর্ষণ করে হত্যা করা একটি জঘন্য ঘটনা। এ ঘটনার বিচার এমনভাবে করতে হবে যাতে সমাজে এ ধরণের ঘটনা আর না ঘটে।’
তিনি বলেন, ‘হিরামনি তাঁর বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী। জেডিসির সমাপনী পরীক্ষায় ‘এ’ গ্রেড পেয়েছে সে। মেধাবী এবং নম্র স্বভাবের ছাত্রী ছিলো হিরামনি। তাকে হারিয়ে আমরা শোকাহত।’
তিনি জানান, আর্থিকভাবে তার পরিবার অসহায় হওয়ায় বিনা বেতনে বিদ্যালয়ে অধ্যায়ন করতো হিরা। এছাড়া বছরে ১২ শ’ টাকার একটি বেসরকারী বৃত্তি তাকে প্রদান করা হতো। সরকারীভাবে বছরে দুইবার উপবৃত্তিও পেত সে।
স্থানীয়রা বলেন, ‘গত দুই বছর থেকে হিরামির পিতার চিকিৎসা করাতে গিয়ে তাদের আর্থিক অবস্থা একদম খারাপ। এলাকাবাসীর সহযোগীতায় পরিবারটি চলছে। যখন তারা পিতা হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে, ঠিক তখনই নরপশুরা হিরামনির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ধর্ষণের মতো জঘন্য এবং ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়ে তাকে হত্যা করছে। ঘটনার সাথে জড়িতদের এমন বিচার হোক যেন পরবর্তীতে কেউ এ ধরণের ঘটনা ঘটানোর সাহস না পায়। আর অসহায় পরিবারটি যেন নায্য বিচার পায়।’
প্রসঙ্গত, শুক্রবার (১২ জুন) দুপুরে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ হামছাদী ইউনিয়নের পশ্চিম গোপীনাথপুর গ্রামে নবম শ্রেণির ছাত্রী হিরামনিকে ঘরে একা পেয়ে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে দূর্বৃত্তরা। সে একই গ্রামের হারুনুর রশিদের মেয়ে।
ক্যান্সারে আক্রান্ত বাবাকে নিয়ে তার মা ও ছোট দুই ভাইবোন ঢাকায় হাসপাতালে ছিল। হিরামনি শুক্রবার সকালে নানার বাড়ি থেকে নিজ বাড়িতে এসে এ হত্যাকান্ডের শিকার হন। মৃতদেহের ময়নাতদন্ত শেষে শনিবার দুপুরে পরিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
নিজস্ব প্রতিবেদক/লক্ষ্মীপুর/এনইউ ” ”> ” ”>