আজ ২৩ জুন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জন্মদিন। ১৯৪৯ সালের এই দিনে ঢাকার কেএম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক এ দলের আজ ৭১ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষির্কী।
ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধসহ সব আন্দোলন-সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়া দলটি এবার পা রাখছে ৭২ বছরে। দীর্ঘ এই পথচলায় এসেছে বাধা-বিপত্তি-দুর্যোগ-দুর্বিপাক। পাড়ি দিতে হয়েছে নানা চড়াই-উতরাই। কিন্তু নেতা-কর্মীদের ইস্পাতদৃঢ় মনোবল এবং একতায় দমে যায়নি উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ এ দলটি।
টানা তৃতীয়বারসহ চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা দলটি যখন ইতিহাসের সবচেয়ে ‘সুসময়’ পার করছিল, তখনই সামনে এসেছে এক ব্যতিক্রমী চ্যালেঞ্জ। আন্দোলন-সংগ্রামে পরীক্ষিত দলটিকে এবার লড়াই করতে হচ্ছে নতুন মহামারী করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে।
এমন প্রেক্ষাপটে এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জাঁকজমক কোনো আয়োজন নেই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর বছরেও তাই সীমিত কর্মসূচিতেই থাকতে হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলটিকে।
তবে দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বলছেন, মানুষের ভালোবাসা ও সমর্থন নিয়ে আওয়ামী লীগ সব সময়ই বিজয়ী হয়েছে।
কালক্রমে আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান—দুটি নাম একে অপরের পরিপূরক হয়ে ওঠে। এবার বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছে দেশ। সে হিসাবে এবারের আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীও জাঁকজমকপূর্ণই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাস পরিস্থিতি সবকিছু পাল্টে দিয়েছে।
করোনার কারণে তিন মাস ধরেই মানুষ অনেকটা ঘরবন্দী। করোনা পরিস্থিতির কারনে এবার আর খোলা মাঠে, অনেক মানুষের সমাগমে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি হচ্ছে না। সবই চার দেয়ালে, ডিজিটাল মাধ্যমে সীমাবদ্ধ থাকছে। বাইরের কর্মসূচির বলতে ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি ও গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় তাঁর মাজারে স্বল্পসংখ্যক মানুষের উপস্থিতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন রয়েছে।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, এ বছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সাজসজ্জা ও অন্যান্য কর্মসূচির খরচ বাঁচিয়ে তা দুস্থদের মাঝে ব্যয় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
প্রতিবছরই ২২ জুন দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে মহানগর ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে কেক কেটে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন শুরু হতো। এরপর সূর্যোদয়ের ক্ষণেক্ষসব দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হতো।
সকালে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে দলীয় সভাপতিসহ অন্যরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতেন। এ ছাড়া আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও করা হতো। কিন্তু এবার করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে দলের সব কর্মসূচিই স্থগিত করা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠার শুরুতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ছিলেন মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শামসুল হকের মতো প্রথিতযশা নেতারা। এই দল ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনে জনগণের পাশে থেকে গণমানুষের সংগঠনে পরিণত হয়।
’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, আইয়ুব খানের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ’৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন ও ’৬৯-এর গণ–অভ্যুত্থান সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে এ দেশের মানুষকে সংগঠিত করে আওয়ামী লীগ।
এভাবে ২৪ বছরের সংগ্রাম পরিণতি পায় ১৯৭১ সালে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে। ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের লাল-সবুজের পতাকা ও বাংলাদেশের মানচিত্র অর্জিত হয়।
দেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার হত্যা করে কিছু বিপদগামী সেনাসদস্য। এরপর সাময়িকভাবে কিছুটা দিশেহারা হয়ে পড়ে আওয়ামী লীগ। ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে এসে দলের হাল ধরেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারপর থেকেই তিনি এই দলের সভাপতি।
দীর্ঘ ২১ বছর লড়াই সংগ্রামের মাধ্যমে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। ২০০১ সালে ক্ষমতার বাইরে চলে যায় দলটি। এক-এগারোর ঝঞ্ঝা মোকাবিলা করে ২০০৯ সালে পুনরায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ ও এর মিত্ররা।
সেই থেকে টানা ক্ষমতায় শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ। পরবর্তী সময়ে ২০১৪ সালের ৫ জানুযারির এবং ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ।
প্রবাস সময় ডেস্ক ” ”> ” ”>