মেঘনার অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে লক্ষ্মীপুরে ব্যাপক ক্ষতি

প্রকাশঃ

মেঘনা নদীর অতিরিক্ত জোয়ারের পানির তোড়ে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার মতিরহাট বাজার সংলগ্ন একটি ব্রীজ বিধ্বস্ত। ছবি প্রবাস সময়

মো. নিজাম উদ্দিন : মেঘনা নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে লক্ষ্মীপুরের উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে ভেঙ্গে গেছে বেড়িবাঁধ।

বিধ্বস্ত হয়েছে রাস্তাঘাট এবং ব্রীজ-কালভার্ট ও কাঁচা ঘরবাড়ি। পানিতে ডুবে গেছে ফসলি জমি, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ এবং হাঁস। টানা বৃষ্টিতেও জেলার বিভিন্নস্থানে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।

লোকালয়ে পানি ঢুকে মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাময়িক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। জোয়ারের তীব্র আঘাতে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে বসতবাড়ি, ফসলি জমিসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।

সরকারী হিসেব মতে, জোয়ারের পানিতে জেলাতে ১৫ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। সাময়িকভাবে পানির নীচে ডুবে ছিলো প্রায় ২৬ হাজার হেক্টর জমির ফসল। বিনষ্ট হয়েছে কয়েক কি. মি পাকা সড়ক। সবকিছুর ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ছে লোকালয়ে।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে স্ব-স্ব কর্তৃপক্ষ ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করছেন। তবে প্রাথমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র লোকজনের মাঝে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলার সদর উপজেলার চররমনী মোহন ইউনিয়নের বুড়িরঘাট সংলগ্ন বিস্তৃর্ণ এলাকার ভাঙ্গা বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের সময় লোকালয়ে পানি ঢুকছে।

জোয়ারের পানি নামার সময় ওই এলাকার একাধিক কাঁচা-পাকা রাস্তা বিধ্বস্ত হয়ে যায়। এ সময় তলিয়ে গেছে মাছের খামার। ভেঙ্গে গেছে নদীর তীরবর্তী কয়েকটি বসতবাড়ি।

জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে রাস্তা-ঘাটের ব্যাপক ক্ষতি করে। ছবিটি রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডার ইউনিয়নের মুন্সিরহাট এলাকা থেকে তোলা।

ওই ইউনিয়নের চর আলী হাসান গ্রামেও বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ দিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকে মাছ চাষের পুকুরসহ ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে নদীসংলগ্ন ওই ইউনিয়নের করাতির হাট ও ভূইয়ারহাট এলাকা।

কমলনগর উপজেলার তোবারগঞ্জ-মতিরহাট আঞ্চলিক সড়কের মতিরহাট বাজার সংলগ্ন এলাকায় একটি ব্রীজ জোয়ারের পানির স্রোতে ভেঙে পড়ে। এতে ওই সড়কে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উপজেলার আরও বেশ কয়েকটি এলাকা।

জোয়ারের পানি ঢুকে গেছে একটি মসজিদে। এতে নামাজ পড়া বন্ধ ছিলো মুসুল্লীদের। মসজিদের সামনে জাল ফেলে মাছ শিকার করছেন কয়েকজন মৎস্য শিকারী। ছবিটি সম্প্রতি রামগতির বয়ারচর থেকে তোলা।

রায়পুর উপজেলার বিভিন্নস্থানে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে উপকূলের বিভিন্ন এলাকা। বিধ্বস্ত হয়েছে সড়ক ও বেড়িবাঁধ।

রামগতি উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন ও পৌর সভার ৪টি ওয়ার্ডে জোয়ারের পানি ঢুকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উপজেলার চরগাজি ইউনিয়নের বয়ারচর এলাকায়। বয়ারচর ব্রীজ সংলগ্ন জয়নাল মিয়ার তেমুহনী এলাকায় বাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি ঢুকে ঘরবাড়ি, ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

অস্বাভাবিক জোয়ারের তোড়ে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে বসতবাড়ি। ছবিটি রামগতির বয়ারচর টাংকি বাজার এলাকা থেকে তোলা।

জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলি জমি ও মাছের খামার। বয়ারচর টাংকি বাজার এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ অনেকাংশে ভেঙে যায়। এতে বাঁধের পাশে বসবাসরহ প্রায় ১৫ টি পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে।

ওই এলাকার দিনমজুর সাহাবুদ্দিন জানান, ৬-৭ বছর থেকে তিনি বাঁধের পাশে বসবাস করে আসছেন। নদীর তীব্র জোয়ারে তাঁর বসতভিটা ভেঙে গেছে। পরিবারের ১০ সদস্য নিয়ে তিনি এখন অসহায় হয়ে পড়েছেন।

নদীতে ভেঙে নিচ্ছে বসতবাড়িসহ সবকিছু । তাই একটি বসতঘর সরিয়ে নিচ্ছে ঘরের বাসিন্দারা।

একই এলাকার মৎস্য খামারী মো. আবদুর রব বলেন, বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় জোয়ারের পানি তার মৎস্য খামারে ঢুকে পড়ে। এতে প্রায় ৫০ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে।

রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল মোমিন বলেন, মেঘনা নদীর অতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে ফসল, কাঁচাঘর (টিনের ঘর) নষ্ট, রাস্তাঘাট-কালভার্ট বিধ্বস্ত এবং মৎস্য খামারীরা চরম ক্ষতির শিকার হয়েছে।

এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের ব্যাপক অংশ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। নদীতে ভেঙে গেছে অনেকের বসতবাড়ি।

জোয়ারের পানিতে নিমজ্জিত একটি সবজি খেত।

তিনি বলেন, ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরী করে সরকারী সহায়তার আওতায় আনা হবে। আর বিধ্বস্ত বাঁধ এবং রাস্তাঘাট মেরামতের ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্রদের মাঝে নগদ টাকা, চাল এবং প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বেলাল হোসেন বলেন, জোয়ারের পানির সাথে ১৫ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. বেলাল হোসেন খান বলেন, জোয়ার এবং বৃষ্টির পানিতে জেলাতে ২৫ হাজার ৯৬৫ হেক্টর জমির ফসল ডুবে গেছে। এর মধ্যে ১৯ হাজার ৫০ হেক্টর জমির রোপা আমন এবং এক হাজার ৮৫ হেক্টর জমির শাক-সবজি পানির নীচে ডুবে যায়।

ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ সহায়তা তুলে দিচ্ছেন রামগতি ইউএনও এবং উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবাহী প্রকৌশলী ফারুক আহম্মদ বলেন, মেঘনা নদীর উপকূল সংলগ্ন রামগতি ও কমলনগর উপজেলার ৩১ কি. মি এলাকায় বেড়িবাঁধ নেই।

ফলে মেঘনায় জোয়ারের পানি বাড়লে উপকূল সংলগ্ন এলাকাগুলো পানিতে প্লাবিত হয়। বাঁধ নির্মাণ ও ব্লকের কাজের জন্য একটি ডিপিপি প্রনয়ন দাখিল করেছি। এটি বর্তমানে পরিকল্পনা কমিশনে যাচাই-বাচাই চলছে।

জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাওয়া একটি মৎস্য খামার।

বাঁধ নির্মাণ হয়ে গেলে লোকালয়ের মানুষ জোয়ারের পানি থেকে রক্ষা পাবে। এছাড়া জোয়ারের পানিতে উপকূলের বিভিন্নস্থানে বাঁধ বিধ্বস্ত হয়েছে। ভাঙ্গা বাঁধ মেরামতের জন্য প্রকল্প প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদক/লক্ষ্মীপুর/এনইউ

” ”> ” ”>

সর্বশেষ খবর

সৌদিতে ভবনের ছাদ থেকে পড়ে বাংলাদেশি যুবকের মৃত্যু

0
  সৌদি আরবে কাজ করার সময় ভবনের ৩য় তলার ছাদ থেকে পড়ে মো. ইউছুপ (২৬) নামে এক যুবকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। বৃহম্পতিবার (৫ অক্টোবর) এ...

জনপ্রিয় খবর