সুড়ঙ্গ : দেশের গন্ডি পেরিয়ে, বিদেশেও চলছে ‘সুড়ঙ্গ’ উন্মাদনা। ২১ জুলাই সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে।
কি আছে রায়হান রাফি’র সুড়ঙ্গ-এ, এটা কী আসলেই অশ্লিল সিনেমা? ‘সুড়ঙ্গ’ নিয়ে সোস্যাল মিডিয়ায় একটি চক্রের এমন আলোচনা-সমালোচনায় টালমাটাল। এরই মধ্যে সামনে আসে ছবিটির পাইরেসি।
সুড়ঙ্গ দেখা: প্রবাসে নানান ব্যস্ততা, চকে বাঁধা জীবনে সিনেমার জন্য ‘সময়’ কিছুটা কষ্টসাধ্য। তবুও সংখ্যায় কম হলেও প্রবাসীরা হলে যান, সিনেমা দেখেন। সুড়ঙ্গ দেখার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু পাইরেসি নজরে আসার পর আর যেন তর সইছিল না। পাইরেসি চক্রের প্রতি ঘৃনা থেকেই দেখতে যাই ‘সুড়ঙ্গ’।
২৪ জুলাই, নিউইয়র্কের জামাইকা মাল্টিপ্লেক্স সিনেমাস-এ। সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে শো। পুরো সিনেমা হল ছিল হাউসফুল। দর্শকরা সবাই ছিলেন বাংলাদেশি। জামাইকা মাল্টিপ্লেক্স সিনেমাস’র ৬ নাম্বার হলটি বাংলাদেশিদের মিলনমেলায় রূপ নেয়। পাইরেসির মধ্যেও দর্শকদের এমন উপস্থিতি বাংলা সিনেমার জন্য দারুন স্বস্তির।
এ সময়ের শক্তিমান অভিনেতা শহিদুজ্জামান সেলিমের প্রতিটি সংলাপে হলভর্তি দর্শক যেমন হেসেছে, তেমনি আফরান নিশো’র অনবদ্য অভিনয় চোখের কোনে জল এনেছে।
সুড়ঙ্গের কথা: মূলত, প্রেম লোভ ও দ্রোহের গল্প। মাসুদ (আফরান নিশো) মফস্বলের এক প্রেমিক যুবক, পেশায় ইলেকট্রিক মিস্ত্রী। প্রেম করে বিয়ে করেন ময়নাকে (তমা মির্জা)। অভাব অনটনের সংসার। তার ওপর স্বামীর কাছে স্ত্রীর প্রতিদিনের আবদার চাওয়া-পাওয়ায় মাত্রা বাড়ে। ময়না তার চাহিদা মেটাতে মাসুদকে বিদেশ যাবার তাগিদ দেয়। মাসুদ তার ভালবাসার মানুষকে একা পেলে বিদেশ যেতে চায় না। এক পর্যায়ে ময়নার চাহিদা মেটাতে বিদেশ পাড়ি দেয় মাসুদ। ময়না জড়িয়ে পড়ে পরকীয়ায়। এভাবেই এগিয়ে যায় সিমেনার গল্প।
এতে অশ্লীলতার গুরুতর কিছু নেই। গল্পের প্রয়োজনে যে দৃশ্য রয়েছে, তা দেশের অনেক সুপার হিট সিনেমায়ও অতিতে ছিল। সিনেমাটিকে একজন হতভাগ্য প্রবাসীর জীবনের গল্পও বলা যায়। এটি সব শ্রেনী পেশার মানুষের জন্য নির্মিত একটি বাণিজ্যিক সিনেমা। ‘সুড়ঙ্গ’ বাংলাদেশে নির্মিত সেরা সিনেমাগুলোর মধ্যে অন্যতম।
মাসুদ চরিত্রে আফরান নিশো’র অভিনয় ছিল অনবদ্য অসামান্য দূর্দান্ত। বলা যায়, এখন পর্যন্ত এটাই তার জীবনের সেরা অভিনয়। ভালবাসার জন্য আকুতি, আর্তনাদ-হাহাকার, কষ্ট যেভাবে তিনি অভিনয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন তা ছিল অসাধারন। মাসুদ চরিত্রে অভিনয়ে মুগ্ধতা ছড়িছে আফরান নিশো দর্শকদের হৃদয় ছুঁয়েছেন। সিনেমার মাঝামাঝি একটি দৃশ্যে তমা মির্জা সংলাপ বলছিলেন, তখন হলভর্তি দর্শকরা চুপচাপ তা উপভোগ করছিলেন। ওই সময় এক উত্তেজিত এক দর্শক তাকে লক্ষ্য করে বলে উঠলেন, ‘ওই তুই চুপ কর , কথা আস্তে বল। ’নীরবতা ভেঙ্গে দর্শকরা হেসে উঠলেন। এতে স্পষ্ট তমা মির্জা অভিনয়ে সফল।
সিনেমার সবগুলো গানে ছিল মুগ্ধতা। অতিথি চরিত্রে নুসরাত ফারিয়ার আইটেম গানটি ছিল উপভোগ্য। সবার অভিনয় ছিল দারুন। মাসুদের বন্ধু চরিত্রে মোস্তফা মনওয়ার আরও ভাল করতে পারতেন।
পাইরেসি হলেও ‘সুড়ঙ্গ’ হলে গিয়ে না দেখলে বিনোদনের তৃপ্তি মিলবে না। কারন, ‘সুড়ঙ্গ’ সিনেমার সিনেমাটোগ্রাফি, কস্টিউম, ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর, কালার গ্রেডিং, সাউন্ড সিস্টেম অসাধারন। এসবই আপনি মিস করবেন পাইরেসিতে।
দৃষ্টিকটু: শেষ দৃশ্য ভাল লাগেনি। মাসুদ তার স্ত্রী ময়নাকে অন্ধভাবে ভালবেসে তার জন্য জীবনবাজী রেখেছিলেন, অথচ সেই ভালবাসার মানুষকে খুন করেন নির্মমভাবে। অহেতুক এক প্রেমিককে শেষ দৃশ্যে নারী বিদ্বেষি করে উপস্থান করা হয়। মাসুদের নির্মম পরিনতি দেখিয়ে -ই শেষ করা গেলে, সেটাই হতো সিনেমার ভাল সমাপ্তি। এছাড়াও টক শো’র দৃশ্যগুলো ছিল অপ্রয়োজনীয়। এছাড়াও মাসুদ কিভাবে দেখলেন তার স্ত্রীর সঙ্গে বন্ধু’র অনৈতিক সম্পর্ক।, তা ছিল অস্পষ্ট।
ইতিকথা: ‘সুড়ঙ্গ’ রায়হান রাফি’র একটি দূর্দান্ত নির্মাণ। আফরান নিশো’র অনবদ্য অভিনয় ‘সুড়ঙ্গ’-কে দেশ সেরা সিনেমাগুলোর তালিকায় স্থান দেবে। -এম এ আজাদ