নাছির উদ্দিনঃ নান্দনিক সুউচ্চ ভবন, কিংবা যে কোন স্থাপণা তৈরীতে সবচেয়ে বেশি অবদান নির্মাণ শ্রমিকের। তাদের কঠোর পরিশ্রমে, আলোর মুখ দেখে ডিজাইনারের তৈরীকৃত নকশা।
অনেক ক্ষেত্রে জীবনের ঝুঁকি নিতে হয় তাদের। তারপর শ্রমিকের ঘামঝরা কঠোর শ্রমে গড়ে উঠে নান্দনিক স্থাপণা।
অথচ, নির্মাণ শ্রমিকরা কতটুকু নিরাপত্তা বলয়ে সে কাজ করেন তার খবর কেউ রাখে না।
প্রতিজন শ্রমিকের সাথে জড়িয়ে আছে আরো কয়েকটি জীবন। তার এ আয়ের উপর নির্ভর করে পরিবারের বরণ-পোষণ।
সেই শ্রমিক যখন নিরাপত্তা বলয় ছাড়া কাজ করার সময় দূর্ঘটনায় হতাহত হয়। তখন তার পরিবারে নেমে আসে অন্ধকার। পরিবারের চাকা সচল রাখা এ শ্রমিকই যে একমাত্র উপার্জনকারী।
কিন্তু গ্রামীণ পর্যায়ে যেসব ঠিকারদার, বা মালিক পক্ষ নিরাপত্তা বলয় ছাড়া কাজ করিয়ে শ্রমিকদের হতাহতের পথে ঠেলে দিচ্ছেন। তারা কতটুকু ভূমিকা রাখছেন ক্ষতিগ্রস্থ শ্রমিকের পরিবারের জন্য।
হতাহতের ঘটনায় আইনের আওতায় আসছেন কি না? ক্ষতিগ্রস্থ শ্রমিকের পরিবার কি ক্ষতিপূরণ পেল? সেগুলো দেখার জন্য কেউ কি আছে ? এই প্রশ্নগুলো হয়তো এভাবেই থেকে যায়।
এদিকে একজন শ্রমিকের কর্মকালীন সময়ে কী কী নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে, সে বিষয়ে জাতীয় বিল্ডিং কোডে বিস্তারিত বলা হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিষয়গুলো উপেক্ষিত থাকছে।
মাঠ পর্যায়ে কাজ করা শ্রমিকদের অভিযোগ “মালিকরা সেফটি দিতে নারাজ। আজকে কোনো শ্রমিক যদি বলে আমাকে নিরাপত্তা দেন, কালকে তাকে দিয়ে আর কাজ করাবে না।”
২০১৪ সালের জাতীয় বিল্ডিং কোড অনুযায়ী, কাজের সময় একজন শ্রমিকের মাথায় হেলমেট পড়া বাধ্যতামূলক। যারা কংক্রিটের কাজে যুক্ত, তাদের হাতে গøাভসও পড়তে হবে।
চোখের জন্য ক্ষতিকর কাজ যেমন ড্রিলিং, ওয়েল্ডিং, ঢালাইয়ের সময় শ্রমিকদের চশমা ব্যবহার বাধ্যতামূলক। ওয়েল্ডার ও গ্যাস কাটার ব্যবহারের সময় রক্ষামূলক সরঞ্জাম যেমন গøাভস, নিরাপত্তা বুট, এপ্রন ব্যবহার করতে হবে।
ভবনের উপরে কাজ করার সময় শ্রমিকের নিরাপত্তায় বেল্ট ব্যবহারও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ন্যাশনাল বিল্ডিং কোডে।
তবে মিরসরাইয়ের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় সব জায়গায় উপেক্ষিত রয়েছে শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি।
সম্প্রতি মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ থানাধীন নাহেরপুর গ্রামের একটি নির্মাণাধীন ভবনে গিয়ে দেখা যায়, ২য় তলায় ইটের গাঁথুনির কাজ করছেন কয়েকজন শ্রমিক। ছাদের একেবারে প্রান্তে দাঁড়িয়ে কাজ করলেও তাদের কোনো নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই। শ্রমিকদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখা যায়নি।
ওই ভবনের চারপাশে কোনো নিরাপত্তা বেস্টনিও করা হয়নি। কাজের সময় শ্রমিকদের হেলমেট, নিরাপত্তা বেল্ট ছাড়াই কাজ করতে দেখা গেল। শ্রমিকদের সাথে বিল্ডিং কোড অনুযায়ী কোন প্রকার নিরাপত্তা উপকরণও ছিল না।
তাদের মধ্যে জামাল নামে একজন বলেন, “কনট্রাকটর দড়ি আর বাঁশ দিয়ে বলে মাচা বানিয়ে কাজ করতে। আমাদের নিরাপত্তায় আর কিছুই দেয় নি। তাই এভাবে কাজ করতে অভ্যাস হয়ে গেছে। কোনো সমস্যা হয় না।”
ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় জানা যায়, ইমারত নির্মাণ বিধিমালা, শ্রম আইন সব জায়গায় শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়ে বলা থাকলেও ঠিকাদার ও উপ ঠিকাদাররা কখনও অবহেলা, কখনও অতি লোভের কারণে তা এড়িয়ে যান।
অথচ আইনে “পরিষ্কারভাবে লেখা আছে, মালিক তার শ্রমিকদের নিরাপত্তায় সব ধরনের ব্যবস্থা নিবে। উপকরণ সরবরাহ করবে। কিন্তু নিরাপত্তা যন্ত্রপাতি কিনতে টাকা খরচ হয়। তাই তারা এগুলো এড়িয়ে যায়।”
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “যেহেতু গ্রামাঞ্চলে নির্মাণ কাজ চলার সময় কোন প্রকার পরিদর্শন হয় না, তাই এ ব্যাপারে ভবন মালিকরাও সতর্ক হন না। পরিদর্শন হলে লোকজন জানত যে বাড়ি করার সময় তা দেখার জন্য পরিদর্শক আসবে।
কিন্তু একটা এলাকায় একটি বাড়িতে গিয়ে পরিদর্শন করলেও মানুষ বুঝে যায় যে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে।”
নাছির উদ্দিন, মিরসরাই, চট্টগ্রাম। ” ”> ” ”>