
মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদকে আমি ব্যক্তিগতভাবে জানি না । তবুও এ মানব বীরকে শ্রদ্ধার সাথে স্যালুট জানাচ্ছি ।
বাংলাদেশে প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসে প্রথম হানা দেয় যেই জেলায়, সেটি আমার নিজের মাটি নিজের জেলা নারায়ণগঞ্জ।
দেশ এবং বিদেশে এই খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়লো। এদিকে আমেরিকার নিউইয়র্কে করোনা মহামারী প্রচন্ড আঘাত হানলো, অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জে ।
নিউইর্য়কে আমি পরিবারসহ বসাবস করি। এ অবস্থায় আমার এক প্রিয় বন্ধু বললেন, ভাই কি হলো? করোনায় একদিকে আপনার দেশের বাড়ী নারায়ণগঞ্জে, অন্যদিকে নিউইয়র্কে আঘাত হানলো। এটার কারন কি।
আমি ভিতরে ভিতরে ভয় পেয়ে গেলেও সাহসের সাথে বললাম, “ভাই আল্লাহ তার নেক বান্দাদের কঠিন বিপদে ফেলে তাদের ধৈর্ধয পরীক্ষা করেন।”
কঠিন বিপদের মধ্যেও আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাদের সাহায্য করার জন্য কোন না কোন সাহসী বীরকে পাঠান। তারই একজন এই বীর বাহাদুর খোরশেদ। মানুষ যখন ভয়ে ঘর থেকে বাহির হতে চায় না।
পরিবারে কেউ মারা গেলে পরিবারের আপন সদস্যরা যখন লাশ দাফনে দূরে সরে যান। হিন্দু পরিবারে সদস্যদের কেউ সৎকারে আসেন না। তখন এই মানবতার ফেরিওয়ালা তার স্বেচ্ছাসেবক দলকে সাথে নিয়ে জীবনের ঝুঁকি জেনেও এসব দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নিচ্ছেন।
শুধু তাই নয়, নিজে গাড়ি চালিয়ে জীবাণুনাশ ছড়াচ্ছেন এলাকার অলিতে-গলিতে। নিজ এলাকার মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছেন খাবার, হ্যান্ড সেনেটাইজার, লিকুইড সাবান।
মানব কল্যানে নিজেদের নিয়োজিত করে, আজ খোরশেদ ও তার টিম প্রমাণ করলো মানুষ সৃস্টির সেরা জীব। সার্থক করলো মানবজন্ম।
খোরশেদ ভাইসহ একদিন আমরা সবাই চলে যাবে কিন্তু যারা এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকবে তাদের কাছে মাকসুদুল আলম খোরশেদ এক বীর হয়ে ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ থাকবে।
এই প্রজন্ম অথবা পরবর্তি প্রজন্ম এই সকল বীরকে মনে রাখুক বা না রাখুক কর্মগুনেই খোরশেদ বেঁচে থাকবেন।
এদিকে নিউ ইর্য়কে প্রবাসী বাংলাদেশিরা কঠিন সময় পার করছে । বিশেষ করে করোনায় বাংলাদেশিদের মৃত্যুতে তাদের পরিবারের মাঝে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
পুরো কমিউনিটির মাঝে প্রচন্ড ভয় ও ভীতির অবস্থা সৃস্টি হয়েছে। এই সময় প্রবাসের বৃহৎ সামাজিক সংগঠন বাংলাদেশ সোসাইটি প্রবাসীদের পাশে এসে দাঁড়ায়।
বাংলাদেশিদের লাশ দাফনের ব্যবস্থা, জরুরী তথ্য ফেসবুক ও গণমাধ্যমে প্রচার, ২৪ ঘন্টা সেবার জন্য টেলিফোন,সোসাইটির কয়েকজন এবং বিশিস্ট সমাজকর্মী জয় চৌধুরী, কাজী ফোজিয়াসহ বেশ কয়েকজন সমাজসেবক ব্যক্তিগত উদ্যোগে এই মহাবিপদে পড়া বয়স্ক সিটিজেন ও বৈধ কাগজ পত্রহীন অধিবাসীদের বাড়ীতে নিত্য প্রয়োজনীয় খাবার সামগ্রী, ওষুধ,পোঁছে দিয়েছে ।
এই সময় আরো অনেক প্রবাসী প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, সামাজিক সংগঠন গুলো মানুষের কল্যানে এগিয়ে আসছে। এখানকার সরকারও ২৪ ঘন্টা তার সিটিজেনদের জন্য যথেস্ট করে যাচ্ছে।
সর্বশেষে বলব, মানুষ মানুষের জন্য। দোয়া রইল, মানবতার ফেরিওয়ালা নারায়ণগঞ্জের কাউন্সিলর মানব বীর খোরশেদের জন্য। আসুন, কিছুটা হলেও আমরা অসহায়দের পাশে দাঁড়াই। আল্লাহ বিপদ হতে রক্ষা করবেন,আমিন।
– মোহাম্মদ আলী, কোষাধ্যক্ষ; বাংলাদেশ সোসাইটি,নিউ ইর্য়ক, যুক্তরাষ্ট্র।