নিজস্ব প্রতিনিধি: প্রাণঘাতি করোনায় হানা দিয়েছে মেঘনাপাড়ের জেলা লক্ষ্মীপুরে। এ জেলায় দিন দিন বেড়ে চলছে আক্রান্তের সংখ্যা।
সাধারন মানুষ ছাড়াও আক্রান্ত হচ্ছেন ডাক্তার নার্স জনপ্রতিনিধিসহ স্বেচ্ছাসেবীরা।
ইতোমধ্যে, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে অন্তত ২০জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন সাংবাদিক ডাক্তার নার্স, জনপ্রতিনিধি ও স্বেচ্ছাসেবী।
এতে করে মানুষের মাঝে আতঙ্ক উৎকন্ঠা বিরাজ করছে।
এদিকে লকডাউন শিথিল ও জনসচেতনার অভাবে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে বলে দাবি করছেন সচেতন মহল। তারা জেলায় পুনরায় লকডাউন কার্যকর করার দাবি জানিয়েছেন।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, জেলায় ১৭ মে পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৯৯ জন। এদের মধ্যে ডাক্তার নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীসহ স্বাস্থ্য বিভাগের ১৫ জন রয়েছেন।
তাদের মধ্যে ১৭ মার্চ ৪জন ডাক্তার ও দুইজন নার্স শনাক্ত হন। চিকিৎসক নার্সদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯জন আক্রান্ত হয়েছেন রায়পুর উপজেলায়।
মোট আক্রান্তের মধ্যে সদরে ২৮, রামগঞ্জে ২২, রামগতি ১০ কমলনগর ৮ ও রায়পুর উপজেলায় ৩১ জন। এরমধ্যে রোগ শনাক্ত হওয়ার আগেই একজন মারা গেছেন। জেলায় আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৩৫ জন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানায়, লকডাউন শুরুর পর সদর আসনের এমপি একেএম শাহজাহান কামালের পক্ষথেকে তার প্রতিনিধি বায়োজিদ ভূঁইয়া অসহায় মানুষদের খাদ্য সহায়তা দিয়ে আসছিলেন। রাত-দিন তিনি নিজেই বাড়ি-বাড়ি এ খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেন। ১০ মে তার করোনা শনাক্ত হয়।
এ দূর্যোগে খাদ্য সহায়তা নিয়ে কর্মহীন মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সুনাম কুড়ানো, রায়পুর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মারুফ বিন জাকারিয়া করোনায় আক্রান্ত হন। ১৭ মে তার করোনা শনাক্ত হয়।
একইদিন জেলার বিটিভি প্রতিনিধি সাংবাদিক জহির উদ্দিনের করোনা শনাক্ত হয়। তিনি নিজের অবস্থান থেকে মানুষের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে এবং সংবাদ সংগ্রহ করতে যেয়ে করোনায় আক্রান্ত হন।
জেলা জজ কোর্টের শিক্ষানবীশ আইনজীবী, কমলনগর উপজেলার স্বেচ্ছাসেবী ফখরুল মাহমুদ। নিজের সাধ্যমতে, করোনায় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন সহায়তা নিয়ে। তিনিও করোনায় আক্রান্ত।
গত ২৯ এপ্রিল করোনা শনাক্ত হন জেলার রামগতি উপজেলার চরগাজি ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন। তিনিও খাদ্য সহায়তা নিয়ে মেঘনাপাড়ের দুঃস্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।
বর্তমানে এরা সবাই চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এদিকে, শুরুতে করোনার হটস্পট হিসেবে জেলার রামগঞ্জ চিহ্নিত হলেও, বর্তমানে সর্বোচ্চ আক্রান্ত রায়পুর ও সদর উপজেলায়।
লকডাউন শিথিল করার কারনে জেলার চন্দ্রগঞ্জ, রায়পুর, জেলা সদরসহ বিভিন্ন হাটবাজারে মানুষের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। সামাজিক সুরক্ষা নির্দেশনা মানছেন না, ব্যবসায়ী বা ক্রেতারা। লকডাউন শিথিলের পর থেকেই জেলায় বাড়ছে করোনায় আক্রান্তের সংখ্য।
গত সোমবার চন্দ্রগঞ্জ বাজারে মানুষের ব্যাপক উপস্থিতির কারনে, করোনা সংক্রমণ এড়াতে পুরনায় লকডাউন বহাল করে পুলিশ প্রশাসন ও বাজার কমিটি।কিন্তু ৩দিন পর কোন এক অদৃশ্য কারনে আবারও লকডাউন শিথিল করা হয়।
এছাড়াও জেলার রায়পুর, রামগঞ্জ উপজেলায় পুনরায় লকডাউন বহাল করা হলেও কমছে না মানুষের সুরক্ষাহীন উপস্থিতি।
সেকারনে পুরো জেলায় লকডাউন কার্যকর করার জন্য প্রশাসনের জরুরী কঠোর হস্তক্ষেপ চাইছেন জেলার সচেতনমহল।
জেলার সিভিল সার্জন মো. আবদুল গফ্ফার জানান, দিন দিন আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধিতে উদ্ধিগ্ন তারা।
এ পর্যন্ত যারা আক্রান্ত হয়েছে, তাদেরকে বাড়ি ও হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্য বিভাগের সকলে নিরলস কাজ করছেন।
কারো করোনার উপসর্গ সর্দি কাশি জ্বর দেখা দিলে গোপন না করে স্বাস্থ্য বিভাগে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানান তিনি।
নিজস্ব প্রতিনিধি/লক্ষ্মীপুর/ এমআর