খুলনা: চারিদিকে অথৈ পানি। আর এই হাঁটু পানিতে দাঁড়িয়ে পবিত্র ঈদের নামাজ আদায় করলেন হাজারো মানুষ।
কেন পানিতে আদায় করা হলো নামাজ, বাড়ির উঠানে কিংবা ভিটিতে কেন আদায় করা গেল না নামাজ? খুলনার কয়রা উপজেলার এ ঘটনায় প্রশ্ন জাগতে পারে যে কারোই।
তবে এনিয়ে নানা মত থাকলেও, ওই এলাকায় নদী ভাঙনে মানুষের দূর্ভোগের যে অন্ত নেই; সেটা নিয়ে একমত স্থানীয় সবারই।
স্থানীয়রা জানায়, ঘূণিঝড় আমফানের কারনে কয়রা উপজেলার ১২১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের প্রায় ৪০ কিলোমিটার ভেঙ্গে যায়। এতে করে তলিয়ে যায় উপজেলার ৭০ থেকে ৮০ ভাগ এলাকা।
সোমবার (২৫ মে) ঈদুল ফিতরের দিন সেই ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ নির্মাণে স্বেচ্ছাশ্রমে অংশ নিয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। ওইসময়ে কাজের ফাঁকে সকাল ১০টার দিকে হাঁটুপানিতে দাঁড়িয়েই আদায় করেন পবিত্র ঈদের নামাজ।
ঈদের নামাজে ইমামতি করেছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাওলানা আ খ ম তমিজ উদ্দিন। নামাজ শেষে সেমাই খেয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ তৈরি করতে নামেন এলাকাবাসী।
দুপুরে তাদের জন্য আয়োজন করা হয়েছে খিচুড়ির। এভাবেই ঈদের দিন বাঁধ মেরামতে সময় পালন করছেন আইলা ও আম্পানে ক্ষতবিক্ষত হওয়া কয়রার মানুষ।
নামাজ শুরুর আগে কয়রা উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম জনগণের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন।
বক্তব্যে তিনি লণ্ডভণ্ড কয়রার দুর্বিষহ অবস্থা তুলে ধরেন এবং মজবুত বাঁধ নির্মাণ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এছাড়া স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ বাঁধার কাজে অংশগ্রহণ করার জন্য এলাকাবাসীকে ধন্যবাদ জানান।
এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, এবার অন্যরকম এক ঈদ উদযাপন করছি আমরা।স্বেচ্ছাশ্রমে বেড়িবাঁধ নির্মাণে এসে জোয়ারের পানি যখন হাঁটুপানি পর্যন্ত পৌঁছায় তখই শুরু হয় ঈদের নামাজ। প্রায় ছয় হাজার মানুষ নামাজে অংশ নেন। আমি ব্যক্তিগত উদ্যোগে সবার জন্য ঈদের সেমাইয়ের ব্যবস্থা করেছি। এছাড়া দুপুরে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে খিচুড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কয়রা পাউবোর ১৩/১৪-১ ও ১৩/১৪-২ নম্বর পোল্ডারের (চারদিকে নদীবেষ্টিত দ্বীপ অঞ্চল) অন্তর্ভুক্ত। এর পূর্ব পাশে সুন্দরবনের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে শাকবাড়িয়া নদী, দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে কপোতাক্ষ ও উত্তর পাশে রয়েছে কয়রা নদী। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে খুলনার ৯টি উপজেলার ৮৩ হাজার ৫৬০টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এর ফলে ক্ষতিতে পড়েছেন সাড়ে ৪ লাখ মানুষ। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে কয়রা উপজেলায়, সেখানে ৪০ কিলোমিটার বাঁধ ভেঙে যাওয়ার ফলে ৮০ শতাংশ এলাকাই প্লাবিত হয়ে পড়েছে।
ঝড় ও বন্যার কারণে কয়রা উপজেলার প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমির ফসল লবণ পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বাঁধ ভেঙে জোয়ারের ছোট-বড় পাঁচ হাজার মাছের ঘের ভেসে গেছে।
নিজস্ব প্রতিনিধি/এমআর ” ”> ” ”>