‘মধু খাওয়া’ অনুসারীরা পাশে নেই এমপি পাপুলের!

প্রকাশঃ

কাজী সহিদ ইসলাম পাপুল। লক্ষ্মীপুর-২ রায়পুর আসনের এমপি। কুয়েতে গ্রেফতারের পর তিনি দেশ বিদেশে আলোচিত-সমালোচিত হন।

অর্থ ও মানব পাচারের অভিযোগে তাকে কুয়েতের কারাগারে পাঠানোর পর থেকে অনুসারীদের অধিকাংশ তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।

এসব অনুসারীদের অধিকাংশই কেন্দ্রীয় ও জেলা-উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী।
অভিযোগ রয়েছে, অনুসারীরা সবাই তার কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়েছিলেন।

তবে, দলীয় কোন্দল, আধিপত্য ও তার অর্থ হাতিয়ে নেয়াকে কেন্দ্র করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েক নেতার সঙ্গে পাপুলের বিভক্তি তৈরী হয়।

দলীয় সূত্র ও স্থানীয়রা জানায়, ২০১৬ সালে রায়পুর পৌর আওয়ামী লীগের আহবায়ক কাজী জামশেদ বাক্কী বিল্লাহ’র হাত ধরে এলাকায় আসেন পাপুল।

এরপর থেকে জেলা ও রায়পুর উপজেলা আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতাদের সঙ্গে পাপুলের সর্ম্পক গড়ে উঠে।

এ ‘মধুর’ সর্ম্পকের তালিকা যোগ হয় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাও।

এরমধ্যে গেল বছরের শেষের দিকে পৌরসভা ও উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগে আর্থিক লেনদেন ও আধিপত্য নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে পাপুলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন পৌর মেয়র ইসমাইল হোসেন খোকন ।

পাপুল স্থানীয় আওয়ামী লীগের কোন পদে না থাকলেও, এমপি হওয়ার পর রায়পুর পৌরসভা ও উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগর নিয়ন্ত্রণ করতেন।

আর স্থানীয় আওয়ামী লীগের এ নিয়ন্ত্রণ হাতের মুঠোয় নিতে তার টাকা ‘উচ্চতর এন্টিবায়োটিক’ হিসেবে কাজ করে।

আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয় সম্পাদক হারুনুর রশিদের ভাই রায়পুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদের সঙ্গেও বিরোধ দেখা দেয় পাপুলের।

যদিও মামুন একসময় পাপুলের অনুসারী হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। মামুনুর রশিদকে উপজেলা পরিষদের নির্বাচন করার জন্য ১০ লাখ টাকা দেয়ার কথা জানিয়েছেন এমপি পাপুল। স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক সম্মেলনে পাপুল বক্তব্যে এ কথা জানান।

প্রধান অনুসারী হিসেবে পরিচিত বাক্কী বিল্লাহ বর্তমানে পাপুলের সঙ্গে নেই বলেও একটি সূত্র জানিয়েছে। কেরোয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উদ্যোগে পাপুল ও তার স্ত্রী সেলিনা ইসলামকে দেয়া এক সংবর্ধণা অনুষ্ঠানের টাকা আত্মসাত নিয়ে বাক্কী বিল্লাহ’র সঙ্গে পাপুলের দূরত্ব তৈরী হয়।

পাপুলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত রায়পুরের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাষ্টার আলতাফ হোসেন হাওলাদার, উপজেলা আওয়ামী লীগ সদ্য সফিকুল ইসলাম পাঠান, আওয়ামী লীগ নেতা তাফাজ্জল হোসেন, আদনান চৌধুরী, আবু সালেহ মিন্টু ফরায়জী, আব্বাস উদ্দিন পাটোয়ারীসহ বেশ কয়েকজন বর্তমানে পাপুলের বিরুদ্ধে অবস্থান করছেন।

এছাড়াও, তার অনুসারী নেতাকর্মীকে অর্ধশতাধিক মোটরবাইক কিনে দেয়া হলেও তাদের অধিকাংশই বর্তমানে পাপুলের সঙ্গে নেই।

তবে এখনো পাপুলের পক্ষে রয়েছেন তার অনুসারী জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য রফিকুল হায়দার বাবুল পাঠান, জেলা পরিষদের সদস্য আরিফ হোসেন, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ন আহবায়ক সালাহ উদ্দিন বাবুসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কয়েকজন নেতা।

এলাকাবাসি বলছেন, সাংসদ পাপুলের বিরুদ্ধে উন্নয়ন কাজের টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ না থাকলেও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে রয়েছে। এমপি হওয়ার পর উপজেলায় তেমন উন্নয়ন কাজ হয়নি। তবে বিপদগ্রস্থ মানুষদেরও ব্যাক্তিগতভাবে সহযোগিতা করেন পাপুল।

একসময় যারা সভা-সমাবেশে পাপুলকে দানবীর হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন, এখন তাদের অধিকাংশই বলছেন পাপুল মানবপাচারকারি। অথচ, এরাই পাপুলের ‘মধু’ খেয়েছেন।

উল্লেখ্য, গত ৬ জুন মানবপাচার, ভিসা বাণিজ্য ও অর্থপাচার সংক্রান্ত অপরাধে পাপুলকে কুয়েতের মুশরেফ আবাসিক এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারের পর আদালতে হাজির করলে জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক।

নিজস্ব প্রতিনিধি/লক্ষ্মীপুর/এমআর

সর্বশেষ খবর

সৌদিতে ভবনের ছাদ থেকে পড়ে বাংলাদেশি যুবকের মৃত্যু

0
  সৌদি আরবে কাজ করার সময় ভবনের ৩য় তলার ছাদ থেকে পড়ে মো. ইউছুপ (২৬) নামে এক যুবকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। বৃহম্পতিবার (৫ অক্টোবর) এ...

জনপ্রিয় খবর