লক্ষ্মীপুর : নির্মাণাধীন একটি সেফটিক ট্যাংকে সেন্টারিং মালামাল খোলার কাজে যান ওমর ফারুক (২২) ও মো. কামাল হোসেন (২৮) নামে দুই নির্মাণ শ্রমিক। প্রথমে ট্যাংকের ভেতরে নামেন নির্মাণ শ্রমিক ওমর ফারুক। মুহুর্তেই নিশ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যান তিনি।
তার সাঁড়াশব্দ না পেয়ে ট্যাংকের উপরে থাকা অন্য শ্রমিক কামাল নীচে নামেন। নিশ্বাস বন্ধ হয়ে মুহুর্তের মধ্যে তারও মৃত্যু হয়।
পরে সোহাগ নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি কোমরে দড়ি বেঁধে নীচে নামের তাদের উদ্ধারের জন্য। নামার সাথে সাথে তিনিও গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয়রা তাকে টেনে তোলেন।
বুধবার সকালে এমন মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বাঙ্গাখাঁ ইউনিয়নের হোগলডুহরী গ্রামের আবদুল বশির ব্যাপারী বাড়িতে।
ট্যাংকটিতে বিষাক্ত গাসের কারণে দুই শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারনা করছেন লক্ষ্মীপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার ওয়াসি আজাদ।
বুধবার (৯ আগষ্ট) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাদের মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ট্যাংকের ভেতর থেকে তাদের মৃতদেহ উদ্ধার করে। দুপুর ২টার দিকে পুলিশ মরদেহ সদর সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
নিহত ওমর ফারুক হোগলডুহরী গ্রামের হাওলাদার বাড়ির (চান্দের বাড়ি) মৃত দ্বীন মোহাম্মদের পুত্র এবং মো. কামাল একই বাড়ির আবুল বাসারের পুত্র।
সেফটিক ট্যাংকটিতে বিষাক্ত গ্যাস থাকায় এবং অক্সিজেন সঙ্কটের কারণে তাদের মৃত্যু হতে পারে বলে ধারণা স্থানীয়দের। এ ঘটনার পরিবারসহ এলাকাবাসীদের মধ্যে শোকের মাতম বিরাজ করছে।
স্থানীয় লোকজন ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হোগলডুহরী গ্রামের আবদুর রশিদ ব্যাপারী বাড়ির মো. নিজাম নামে এক ব্যক্তির সেফটিক ট্যাংকের ভেতরে থাকা সেন্টারিং এর মালামাল খুলতে যায় নির্মাণ শ্রমিক ফারুক ও কামাল। প্রথমে তারা পাম্পের সাহায্যে ট্যাংকের ভেতরের পানি নিষ্কাষণ করে।
পরে ঢাকনা সরিয়ে আবদ্ধ টাংকিতে ঢুকে ফারুক। এর ৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই ফারুকের মৃত্যু হয়। তাকে উদ্ধার করতে কামালও ভেতরে ঢুকলে তিনিও কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে মারা যান।
তাদের উদ্ধার করতে গিয়ে কোমরে দড়ি বেঁধে টাংকির ভেতরে প্রবেশ করেন সোহাগ নামে এক ব্যক্তি। তিনিও গুরুতর আহত হয়ে গেলে স্থানীয়রা তাকে টেনে উপরে তুলে। এতে ইউসুফ নামে আরও একজন আহত হয়। তাদের সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এলাকাবাসী জানায়, গত ৪/৫ মাস আগে সেফটি টাংকটি (ময়লার টাংকি) নির্মাণ করা হয়েছে। এ কয়েক মাস সেটি আবদ্ধ ছিলো। তবে সেটি ব্যবহার শুরু হয়নি। আবদ্ধ থাকায় সেখানে বিষাক্ত গ্যাস জমে থাকতে পারে।
সুমন নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, ‘কাজ করার ফাঁকে বেলা ১১টার দিকে নির্মাণ শ্রমিক ফারুক ও কামাল দোকানে চা-নাস্তা খেতে আসেন। সোয়া ১১টার দিকে তারা কাজে ফিরে যান। এর কয়েক মিনিটের মধ্যেই তাদের মৃত্যুর খবর আসে।
লক্ষ্মীপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার ওয়াসি আজাদ জানান, ট্যাংকটিতে বিষাক্ত গাসের কারণে দুই শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। অপর আহত দুইজনকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
সদর থানা পুলিশের এসআই প্রেমানন্দ জানান, মৃতদেহ উদ্ধার করে সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নিজস্ব প্রতিনিধি/লক্ষ্মীপুর/এমআর