শামসূল হক ভূঁইয়া: গাছে ঝুলছে অসংখ্য সবুজ মাল্টা। মাল্টার এ বাম্পার ফলনে মুখে হাসি ফোটেছে প্রবাস ফেরত সাচ্চু ও তার ৫ বন্ধুর।
সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফেরা শহিদুল ইসলাম সাচ্চু এখন মাল্টার ফলনে ভাগ্য ফেরানোর স্বপ্ন দেখছেন।
চৌদ্দ বছর প্রবাস জীবন কাটিয়ে ২০১১ সালে দেশে ফেরেন তিনি। ফেরার পর দেশেই কিছু করতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। দিলেন টি-শার্ট তৈরির কারখানা। এতে সফল হলেন না। ভাবলেন, বাণিজ্যিকভাবে ছাগল পালন করবেন। ৫ বন্ধুকে সাথে নিয়ে ছাগলের খামার দেখতে গেলেন রাজবাড়ির পাংশায় সবুজ এগ্রো খামারে।
সেখানে গিয়ে দেখলেন মাল্টার বাগান। সে বাগান দেখে বন্ধুরা মিলে সিদ্ধান্ত নিলেন মাল্টার বাগানই করবেন তারা। যে কথা সেই কাজ, গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বরার এলাকায় ৬ বন্ধু মিলে জমি ভাড়া নিয়ে ১৩ বিঘা জমির উপর গড়ে তুলেছেন দু’টি মাল্টা বাগান।
ইউটিউব থেকে মাল্টা চাষ সম্পর্কে ধারণা নেন। পাশাপাশি মাল্টা চাষাবাদ নিয়ে বিভিন্ন নার্সারিতে যোগাযোগ করে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলেছেন।
বাগানে বারি-১ ও ভারতীয় এই দু’টি জাতের মাল্টার গাছ লাগিয়েছেন তারা। ইতোমধ্যে তাদের বাগানে মাল্টা ধরেছে। বাগানে গাছে গাছে থোকায় থোকায় সবুজ মাল্টা আর মাল্টা।
কিছুদিন পর থেকে বিক্রি শুরু হবে। এখন এই মাল্টা বাগানকে ঘিরেই শহীদুলদের স্বপ্ন। তাদের করা বাগান ভরে গেছে সবুজ মাল্টায়, ফলের ভারে নুয়ে পড়েছে বহু গাছ। যা দেখতে প্রতিদিন দূরদূরান্ত থকে ছুটে আসছেন মানুষ। আর মাল্টার এ বাম্পার ফলনে এলাকার চাষিদের মনে জেগেছে আনন্দের ঢেউ এবং স্বপ্ন দেখছেন তারাও ব্যবসায়ীকভাবে লাভবান হওয়ার।
শহিদুল ইসলাম সাচ্চু মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান থানার কোলা এলাকার মো. শাহজাহান খানের ছেলে। তিনি ২০১০ সাল থেকে গাজীপুর মহানগরের কোনাবাড়ী এলাকায় বাড়ি করে বসবাস করছেন।
সাচ্চুর ৫ বন্ধু হলেন, আনোয়ার হোসেন মিঠু, মেজবা উল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, মো. মাসুম ও মো. মনিরুজ্জামান। তাদের কেউ চাকরিজীবি ও কেউ ব্যবসায়ি। ঢাকায় বসবাস করেন তারা।
শহিদুল ইসলাম সাচ্চু জানান, ২০১৭ সালে প্রথমে ৩ বিঘা জমি বাৎসরিক ২০ হাজার টাকা করে ১০ বছরের জন্য ভাড়া নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা বাগান শুরু করেন। সে বাগানে প্রথমে ১৫০টি চারা রোপণ করেছিলেন।
আশানুরূপ হওয়ায় পরের বছর ওই বাগানের কিছু দূরে একইভাবে আরো ১০ বিঘা জমি ভাড়া নিয়ে তাতে মাল্টার চারা রোপণ করেন। তাদের দুই বাগানে মাল্টা গাছের সংখ্যা বর্তমানে ১৩শ’। এর মধ্যে ১২শ বারি-১ জাতের এবং একশ ভারতীয় জাতের।
সাচ্চু বলেন, স্বজনদের ছেড়ে আবার প্রবাসে যেতে মন চাচ্ছিল না। তাই দেশে কিছু করার চিন্তা থেকেই গড়ে তোলেন ‘প্রান্তিক দেশাল এগ্রো’। তাদের বাগানের প্রতিটি চারায় প্রায় পাঁচশ টাকার মতো লেগেছিল।
আনুষ্ঠানিক কোন প্রশিক্ষণ তিনি নেননি। ইউটিউব থেকে মাল্টা চাষ সম্পর্কে ধারণা নিয়েছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন নার্সারিতে যোগাযোগ করে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলেছেন। দুটি বাগানে এ পর্যন্ত ১৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। তা ছাড়া প্রতি বছর জমি ভাড়া, কর্মচারী, সার ও অন্যন্যা পরিচর্যা বাবদ প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে।
গত বছর তার বাগানে কিছু গাছে মাল্টা ফলে। সেগুলো ২০ হাজার টাকার মতো বিক্রি করেন। এবার বাগানের ৫০ ভাগ গাছে মাল্টা ধরেছে। প্রাথমিকভাবে গণনা করে দেখেছেন এ বছর ২৬ হাজার মাল্টা ধরেছে। বাগানের সবগাছে মাল্টা ধরলে আগামী ২/৩ বছরের মধ্যে পুঁজি উঠিয়ে লাভবান হবেন বলে আশা করছেন তিনি।
সাচ্চু জানান, বিষ ও ফরমালিন মুক্ত মাল্টা মানুষের মাঝে পৌঁছে দেয়াই তাদের মূল উদ্দেশ্য। তাদের মাল্টা বাগানে কোন ধরনের রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয় না। নিজেদের তৈরি করা জৈব সার ব্যবহার করা হয়।
মাল্টা গাছে সাধারণত ফেব্রয়ারি-মার্চ মাসে ফুল আসে। আর মাল্টা পরিপক্ক হয় আগস্ট-অক্টোবর মাসে। চলতি মাসের মাঝামাঝি মাল্টা বিক্রি করতে পারবেন তারা। ফলন দেখে তিনি মনে করেন বাণিজ্যিকভাবে আমাদের দেশে মাল্টা চাষ সম্ভব। এসময় তার অন্য বন্ধুরাও একই কথায় সায় দিলেন।
কালিয়াকৈর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আশিষ কুমার কর জানান, ‘প্রান্তিক দেশাল এগ্রো’ মাল্টা বাগান তিনি পরিদর্শন করেছেন। বাগানে ফলন ভাল হয়েছে। সরকারী প্রকল্পের আওতায় মাল্টা চাষ করলে ওইসব চাষিদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয়া হয়।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) এর ফল বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. বাবুল চন্দ্র সরকার জানান, বারি-১ মাল্টা ২০০৪ সালে অবমুক্ত করা হয়। এ জাতটি দেশের প্রতিটি জেলায়ই চাষের উপযোগী এবং ভাল ফলন হচ্ছে।
নিজস্ব প্রতিনিধি/গাজীপুর/এমআর