কর্মী সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কার্যক্রম। চাহিদার তুলনায় কর্মী না থাকায় মাঠ পর্যায়ে গ্রাহক সেবা দিতে কিছুটা বেগ পোহাতে হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির।
এতে করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেবা না পাওয়ায় চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন গ্রাহকরা।
জানা গেছে, ‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ প্রকল্পের আওতায় লক্ষ্মীপুরের প্রতিটা ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার জন্য কাজ করছে লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। ফলে গত ৬ বছরে গ্রাহক সংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুন। কিন্তু সে হিসেবে কর্মী সংখ্যা বাড়েনি। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের উপ-কেন্দ্রও নির্মাণ হয়েছে। ফলে জনবল চাহিদা বেড়ে গেছে।
ইতোমধ্যে জেলার রায়পুর এবং রামগঞ্জ উপজেলাকে শতভাগ ঘোষণা করা হয়েছে। জেলার সদর উপজেলা, কমলনগর ও রামগতি উপজেলাকে অতিস্বত্বর শতভাগ ঘোষণা করা হবে।
এছাড়া জেলার দুর্গম এলাকা ও চরাঞ্চলগুলোতে বসবাসরত বাসিন্দাদের বিদ্যুতের আওতায় আনা হচ্ছে। ফলে পুরাতন গ্রাহকদের সাথে সাথে নতুন গ্রাহকদের চাপ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সূত্র জানায়, বিভিন্নস্থানে লাইন মেরামত, গ্রাহক সংযোগ এবং গ্রাহক প্রান্তে সেবা পৌঁছে দিতে মাঠ পর্যায়ে কর্মরত রয়েছে লাইনম্যানরা। কিন্তু দিন দিন বৈদ্যুতিক লাইনের পরিধি এবং গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকলেও সে হিসেবে লাইনম্যানের সংখ্যা বাড়েনি।
এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় বৈদ্যুতিক লাইন বিধ্বস্তসহ বিভিন্ন ক্রটি দেখা দেয়। তাতে দিন-রাত ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয় তাদের। অনেক সময় বৃষ্টির মধ্যেও গভীর রাতে বৈদ্যুতিক লাইন মেরামতের কাজ করে তারা। স্বল্প জনবলের কারণে অতিরিক্ত কাজের চাপ নিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বৈদ্যুতিক কাজে নেমে পড়েন বিদ্যুৎকর্মীরা। ফলে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থেকে যায়।
লাইন মেরামতে নিয়োজিত কর্মীরা বলছেন, জরুরী বিদ্যুৎ সেবা দিতে সমিতি বদ্ধ পরিকর। যখনই কোন লাইনে ক্রটি দেখা দেয়, সাথে সাথে তাদের সেখানে হাজির হতে হয়। ফলে মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের নির্দিষ্ট কোন কর্মঘন্টা নেই। দিন বা রাত যে কোন সময় তাদেরকে মাঠ পর্যায়ে কাজ করে যেতে হচ্ছে।
এদিকে, গ্রাহকরা অভিযোগ করেন, নতুন মিটারের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ জামানত জমা দেওয়ার পরেও মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হয়। মিটার সংযোগের জন্য দাপ্তরিক কাগজপত্র (সিএমও) তৈরী এবং মাঠ পর্যায়ে মিটার সংযোগ দিতে অনেক সময় লেগে যায়।
কোথাও লাইনে ত্রুটি দেখা দিলে সমিতিকে অবগত করলে সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রেও অপেক্ষায় থাকতে হয় গ্রাহকদের। এসব ক্ষেত্রে সমিতিতে কর্মী সঙ্কট এবং অতিরিক্ত কাজের চাপকে দোহাই দেন কর্তারা।
নতুন গ্রাহকরা বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আসার আগে কার্যালয়ে নতুন সংযোগের জন্য আবেদন করতে হয়। আবেদন সরেজমিন তদন্ত প্রতিবেদন এবং গ্রাহকের ঘরের ওয়্যারিং রিপোর্ট প্রদানের দায়িত্বে থাকা কর্মীরও সঙ্কট রয়েছে।
প্রতিদিন শত শত গ্রাহকের আবেদন জমা হলেও প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন এবং অনান্য দাপ্তরিক কার্য সম্পাদনে অতিরিক্ত সময় লেগে যাচ্ছে। ফলে ইলেকট্রিশিয়ান নির্ভর হতে হচ্ছে দায়িত্বরত কর্মীদের। অনেক ক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ে আবেদন সমীক্ষা এবং ওয়্যারিং পরিদর্শনের কাজটি ইলেট্রিশিয়ানের মাধ্যমে করানো হচ্ছে। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় গ্রাহকদের।
গ্রাহকের ব্যবহৃত মিটার থেকে রিডিং নেওয়া এবং বিলের কপি গ্রাহক প্রান্তে পৌঁছে দেওয়ার কাজে নিয়োজিত কর্মীর সংখ্যা গ্রাহক তুলনায় একেবারে কম। এতে প্রতিটা কর্মীদের অতিরিক্ত দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। ফলে দায়িত্ব পালনে ক্রটি দেখা দেয়।
গ্রাহকদের অভিযোগ, দায়িত্বরত কর্মীরা মিটার প্রান্তে না গিয়ে ইচ্ছেমতো রিডিং উঠিয়ে বিল তৈরী করেন। মিটারের সাথে বিলের কপি সাথে সামঞ্জস্য থেকে যায়। এতে হয়রানি এবং ভোগান্তির শিকার হতে হয় তাদের।
সমিতি সূত্রে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর জেলাতে মোট গ্রাহক সংখ্যা ৪ লাখ ১৩ হাজারের বেশি। গত ৬ বছর আগে গ্রাহক সংখ্যা ছিলো দুই লাখ ৮০ হাজার। আর সমিতির নির্মাণকৃত বৈদ্যুতিক লাইন রয়েছে সাড়ে ৮ হাজার কি. মি.। ৬ বছরে লাইন নির্মাণ হয়েছে প্রায় ৫ হাজার কি. মি.।
বিদ্যুতের উপকেন্দ্র রয়েছে ১০ টি, সদর দফতর ছাড়াও জোনাল অফিস ৩টি, সাব্ জোনাল অফিস একটি এবং অভিযোগ কেন্দ্রের সংখ্যা ১৪। এসব দফতরগুলোতে কর্মরত মোট জনবল সংখ্যা ৪৩০ জন।
এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ আবু তাহের বলেন, জনবল ঘাটতি তো আছেই। আমরা চাইলেই তো জনবল নিয়োগ দিতে পারবো না। তারপরেও আমরা নিরলসভাবে গ্রাহকদের সেবা প্রদান করে যাচ্ছি। অতিরিক্ত কাজের দোহাই দিয়ে কেউ দায়িত্বে অবহেলা করার সুযোগ নেই।
নিজস্ব প্রতিবেদক/লক্ষ্মীপুর/এনইউ