করোনা ভাইরাসে ১৫জন প্রবাসী বাংলাদেশির মৃত্যু, কমিউনিটিতে আতঙ্ক

প্রকাশঃ

করোনা ভাইরাস, বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে মারন এ সংক্রমন রোগ। এ রোগ আতঙ্কে কাঁপছে সারা বিশ্ব। দিন দিন বেড়ে চলেছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা।

আর এ মৃত্যু কিংবা আক্রান্তের মিছিল যোগ হচ্ছে প্রবাসী বাংলাদেশিরাও।

আজ ২৬ মার্চ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্য ও ইতালীতে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১৫জন প্রবাসী বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন দেশে থাকা অন্তত দেড় শতাধিক প্রবাসী বাংলাদেশি আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে। তবে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এ নিয়ে দেশের বাইরে থাকা ‘রেমিটেন্স যোদ্ধা’ খ্যাত প্রবাসীদের মধ্যে বিরাজ করছে চরম আতঙ্ক। গত তিন সপ্তাহ থেকে ইতালি যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে এ ভাইরাসের প্রার্দুভাব বেড়ে যাওয়ায় কর্মহীন জীবন পার করতে হচ্ছে তাদের। হোম কোয়ারেন্টাইনে বা ‘গৃহবন্দী’ থাকায় অনেকেরই আর্থিক সংকট দেখা দিয়েছে। এতে তাদের মাঝে উদ্বেগ উৎকন্ঠা বিরাজ করছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের রেমিটেন্স-এ ব্যাপক ধ্বস নামারও আশঙ্কা রয়েছে।

বিভিন্ন দেশের বাংলাদেশি কমিউনিটি ও গণমাধ্যম কর্মীদের তথ্য মতে, ২৬ মার্চ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, স্পেনসহ কয়েকটি দেশে প্রায় দেড় শতাধিকের বেশী বাংলাদেশি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ৫০জন, স্পেনে ৩২জন, ফ্রান্সে ২৫জন, ইতালি ৩০জন, যুক্তরাজ্যে ২০জন , সিঙ্গাপুরে ১জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত খওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে প্রবাসীরা জানিয়েছেন, আক্রান্তের সংখ্যা আরও বেশী হতে পারে।

ইতালীতে দু’জনের মৃত্যু: গত ২১ মার্চ ইতালির ত্রিয়েস্তে হাসপাতালে মারা যান ফরিদ খান (৬০) নামে এক বাংলাদেশি। তিনি ইতালির মোনফালকোনা শহরে বসবাস করতেন। তার গ্রামের বাড়ি নরসিংদী। এর আগে গত ২০ মার্চ গোলাম মাওলা (৫৫) ও আরেক বাংলাদেশি মারা যায়। তিনি ইতালির মিলান শহরের কমাজিনায় বাসিন্দা ছিলেন। তার স্ত্রীও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

যুক্তরাজ্যে ৫ জনের মৃত্যু: গত ২৪ মার্চ মঙ্গলবার রয়েল লন্ডন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান খশরু মিয়া (৪৯)। টাওয়ার হ্যামলেটসের হোয়াইটচ্যাপেল রোডে সেইন্সবারীর সম্মুখে তাঁর ভেজিটেবল ব্যবসার স্টল ছিলো। তার দেশের বাড়ি জগন্নাথপুর উপজেলার শাহারপাড়া আটঘর গ্রামে। গত ৮ মার্চ মারা যান ৬০ বছর বয়স্ক আরেক ইতালিয়ান বাংলাদেশি। তিনি ম্যানচেষ্টারের বাসিন্দা ছিলেন।

গত ১৩ মার্চ শুক্রবার টাওয়ার হ্যামলেটসে মারা যান ৬৬ বছল বয়স্ক রেহান উদ্দিন। ১৬ মার্চ লন্ডনের গ্রেট অরমন্ড হাসপাতালে মারা যান মৌলভীবাজারের মাহমুদুর রহমান।

২৩ মার্চ সোমবার রয়েল লন্ডন হাসপাতালে মারা যান টাওয়ার হ্যামলেটসের স্যাটেল স্ট্রিটের বাসিন্দা ৮০ বছর বয়স্ক হাজী জমশেদ আলী। তার গ্রামের বাড়ি বিয়ানীবাজার উপজেলার ছনগ্রামে।

যুক্তরাষ্ট্রে ৮ জনের মৃত্যু: গত ২৪ মার্চ ৫ বাংলাদেশির মৃত্যু হয়। এদের মধ্যে তিনজন নারী ও দুইজন পুরুষ। এরা হলেন আবদুল বাতেন (৬০), নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৪২ বছর বয়সের এক নারী, নূরজাহান বেগম (৭০)। তারা নিউ ইর্য়কের কুইন্সের এলমাস্ট হসপিটালে মারা যান।

একই দিন নিউ ইয়র্কে এটিএম সালাম ও ব্রæকলিনের ওজন পার্ক এলাকায় আরেক বাংলাদেশি নারীর মৃত্যু হয়। তার স্বামীর নাম জসিম উদ্দিন।
আবদুল বাতেন নোয়াখালীর সোনাইমুড়ির বাসিন্দা। তিনি ব্রæকলিনে বসবাস করতেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৪২ বছর বয়সের নারীর বাড়ি মৌলভীবাজার জেলায়। তিনি থাকতেন এষ্টোরিয়ায়। এটিএম সালামের বাড়ি রংপুরে। তিনি থাকতেন ওয়েষ্টর বে লং এলাকায়। নুরজাহান ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা। তিনি বাস করতেন এলমাষ্ট এলাকায়।

এছাড়াও গত ২৩ মার্চ তিশা ছাকলাদার (৩৭) নামের এক নারী মারা যান। তিনি তিন সন্তানের জননী ছিলেন। তার স্বামীর নাম বোরহান হাওলাদার। তাদের বাড়ি মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার শাসন গাঁ গ্রামে। নিউইয়র্কের বাংলাদেশি অধ্যুষিত জ্যামাইকার হাইল্যান্ড এভিন্যুর পাশে টিলারি পার্কের একটি অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ে থাকেন তারা।

গত সপ্তাহে মোতাহের হোসেন ও মোহাম্মদ আলী নামের দুইজন বাংলাদেশি মারা যান। তারা নিউ ইর্য়কের কুইন্সের এলমাস্ট হসপিটালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। এদের মধ্যে একজন টেক্সি চালক ছিলেন। তার স্ত্রী ও দুই সন্তান করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

এদিকে নিউইয়র্কে বাংলাদেশিদের মধ্যে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ব্যাপক আকার ধারণ করছে।

নিউ ইয়র্কের র্বোড অব ইলেকশনের সদস্য মাজদো আক্তার বলেন, মেয়রের অফিস থেকে জানানো হয়েছে আক্রান্তদের অধিকাংশ ট্যাক্সিচালক ও ডেলিভারি কাজে নিয়োজিত ছিলেন।

তাদের মাধ্যমে অনেকের পরিবারের সদস্যরাও আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা যারা বাংলাদেশি কমিউনিটির উন্নয়নরে জন্য কাজ করি তাদরেকে মেয়রের বাংলাদেশি মৃত্যুর এ খবর জানানো হয়।

এদিকে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত বিভিন্ন দেশের বাংলাদেশি কমিউনিটিতে বিরাজ করছে চরম আতঙ্ক ও উদ্বেগ উৎকন্ঠা। প্রবাসীরা এক রকম গৃহবন্দী অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন। অপরদিকে প্রবাসে করোনা ভাইরাসের প্রার্দুভাবের কারনে আতঙ্ক, কর্মহীন জীবন। অন্যদিকে বাংলাদেশেও করোনা ভাইরাসের প্রার্দুভাব বা বিস্তৃতির ফলে স্বজনদের জন্য দু’চিন্তা বাড়ছে।

প্রসঙ্গত, গত ২৬ মার্চ পর্যন্ত মারন এ ভাইরাসে বিশ্বে প্রায় ৪লাখ ৮৮হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। সুস্থ হয়েছেন এক লাখ ১৭হাজার ৭৫০জন। মৃত্যু হয়েছে ২২হাজার ৩০জনের। এমন তথ্য জানিয়েছেন জরিপ পর্যালোচনাকারী সংস্থা ওর্য়াল্ড ওমিটার নামের সংস্থা। সংস্থাটির ওয়েভ সাইটে বলা হয়েছে, এ পর্যন্ত এ রোগে বিশ্বের ১৯৬টি দেশ ও অঞ্চল আক্রান্ত হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিনিধি, নিউইর্য়ক

সর্বশেষ খবর

সৌদিতে ভবনের ছাদ থেকে পড়ে বাংলাদেশি যুবকের মৃত্যু

0
  সৌদি আরবে কাজ করার সময় ভবনের ৩য় তলার ছাদ থেকে পড়ে মো. ইউছুপ (২৬) নামে এক যুবকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। বৃহম্পতিবার (৫ অক্টোবর) এ...

জনপ্রিয় খবর