সংসারের ঘানি টানতে ডাল-ভাত খেয়েই বছর পার সৌদি প্রবাসী রাশেদের

প্রকাশঃ

মো. রাশেদ, সতের বছর বয়সের কিশোর। পরিবারের বড় ছেলে। অভাব অনটনের সংসারের ঘানি টানতে মাত্র ১৬ বছর পাড়ি জমিয়েছেন সৌদি আরবে।

প্রতিমাসে আয় করছেন এক হাজার ৫০০ থেকে ৬০০ রিয়াল। পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে রোজগারের প্রায় সব টাকাই পাঠাচ্ছেন বাংলাদেশে। তার প্রতি মাসে খাবারের জন্য খরচ হচ্ছে মাত্র ২০ থেকে ৩০ রিয়াল। আলু-ডাল-ভাল খেয়েই গত এক বছর পার করেছেন রাশেদ।

গত ২৬ আগস্টে ‘প্রবাসী বাংলাদেশি’ নামক ফেসবুক পেজে রাশেদের একটি বক্তব্যের ভিডিওটি প্রকাশ হলে, এটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। পরিবারের জন্য বিদেশে আসা রাশেদ চার মিনিটের বেশি সময় ভিডিওতে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। তবে রাশেদের গ্রামের বাড়ির সন্ধান মেলেনি।

ভাইরাল হওয়া ভিডিও-তে রাশেদ জানান, প্রতি মাসে  আয় করেন ১ হাজার ৫০০ থেকে ৬০০। বাংলাদেশি মুদ্রায় হয় ৩৬ হাজারের অধিক। আয়ের সিংহভাগ টাকা দেশে পাঠান তিনি। প্রতিমাসে বাংলাদেশি টাকায় ৩০ হাজার বা ২৮ হাজার পরিবারের কাছে পাঠান রাশেদ। কখনই দেশে ২৪ হাজার টাকা নিচে পাঠান না।

সাক্ষাৎগ্রহণকারী প্রথম প্রশ্নেই ধাক্কা খান নেটিজেনরা। রাশেদের হাত খরচের কথা জিজ্ঞেস করলেই ১৭ বছরের কিশোর রাশেদ বলেন, প্রতি মাসে তার হাত খরচ ২০ থেকে ৩০ রিয়াল।

এ টাকা মোবাইলের কার্ড কিনতেই চলে যায়? এমন প্রশ্নের জবাবে রাশেদ বলেন, আমি মোবাইল কার্ড ব্যবহার করি না। ওয়াফাই দিয়ে আমার চলে। খাবারের কথা জিজ্ঞেস করতেই রাশেদ যে উত্তর দেন তা হাজারো নেটিজেনদের আপ্লুত করেছে।

রাশেদ জানান, ডাল আর আলু ভাজি ও ভর্তা খেয়ে দিন পার করেন তিনি। টাকা বেশি খরচ হবে বলে মাছ-মাংস খান না। সৌদিতে আসার প্রথম দিকে মাছ-মাংস খেতেন। কিন্তু পরিবারের আর্থিক সংকটের কথা বিবেচনা করে মাছ-মাংস খাওয়া ছেড়ে দেন রাশেদ। ভিডিও গ্রহণের দিন রাশেদ বেগুন ও আলু খেয়েছেন বলেও জানান।

দেশে সবচেয়ে বেশি কাকে মিস করেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে সবার মনে নাড়া দেয়। প্রতিত্তোরে রাশেদ বলেন, মাকে সবচেয়ে মিস করি।

তখন সাক্ষাতগ্রহণকারী নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণের অপারগতা জানিয়ে বলেন, এত অল্প বয়সে মা-বাবার কর্তব্য পালন করতে যে কষ্ট তুমি করছ তা দেখে বাংলাদেশের প্রতিটি পরিবারের সন্তানদের শেখা উচিত।

ভিডিও-তে তিনি আরো বলেন, তোমার মতো বয়সের ছেলেরা দোকানে আড্ডা মারে, সড়কে আড্ডা মারে। কিন্তু ১৭ বছর বয়সে পরিবারের জন্য তুমি বিদেশে এসেছো যা সত্যিই অকল্পনীয়।

টাকা দেয়ার ব্যাপারে ভিডিও-তে হাসিমুখে রাশেদ বলেন, ভাই ছোট, লেখাপড়া করে। বোনকে বিয়ে দিতে হবে। এই মাসে বাড়তি টাকা পাঠাতে হবে। আর টাকা মায়ের কাছে পাঠাই। পরিবারসহ মায়ের জন্য কষ্ট করছি। মা হাশরে কষ্টের কথা বলবে। মা আমাকে ১০ মাস ১০ দিন কষ্ট করে জন্ম দিয়েছে। আমি মায়ের কষ্ট না বুঝলে কে বুঝবে?

মায়ের মৃত্যু হলে তো সব টাকা আমার কাছেই তো থাকবে। মায়ের জন্য সবকিছু করছি। সব টাকা মায়ের কাছে পাঠিয়ে দেই। এখন আমার পকেট খুঁজলে এক টাকাও পাবেন না।

রাশেদের এমন বক্তব্য হাজার-হাজার প্রবাসীর মন ছুঁয়েছে। অনেকেই মন্তব্য করেছেন, এমন অসংখ্য বাংলাদেশি প্রবাসী রাশেদ রয়েছেন। যারা নিজে না খেয়ে পরিবারের জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখছেন।

প্রবাস সময়/এমআর

সর্বশেষ খবর

সৌদিতে ভবনের ছাদ থেকে পড়ে বাংলাদেশি যুবকের মৃত্যু

0
  সৌদি আরবে কাজ করার সময় ভবনের ৩য় তলার ছাদ থেকে পড়ে মো. ইউছুপ (২৬) নামে এক যুবকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। বৃহম্পতিবার (৫ অক্টোবর) এ...

জনপ্রিয় খবর