‘ওরা ভাইরাস বোঝে না, বোঝে ক্ষুধা’

প্রকাশঃ

লক্ষ্মীপুর: ওদের জীবনে চাঁদ উঠুক, না উঠুক, কাল ঈদ। ওরা ভাইরাস বোঝে না, সামাজিক দূরত্ব বোঝে না। ওরা শুধু স্রষ্টা প্রদত্ত সব থেকে কঠিনতম জৈবিক সংকেত বোঝে। যার নাম ক্ষুধা।’

কথাগুলো একজন নারী পুলিশ কর্মকর্তার। স্পীনা রানী প্রামাণিক নামের এই কর্মকর্তা লক্ষ্মীপুরের রায়পুর সার্কেলের (রায়পুর ও রামগঞ্জ) সহকারি পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

শনিবার (২৪ মে) বিকেলে তিনি জেলার রায়পুর উপজেলার হায়দরগঞ্জ-হাজিমারা বেড়িবাঁধ এলাকায় অসহায় মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে উপহার পৌঁছে দেন।

পরে কর্মহীন অস্বচ্ছল এ মানুষগুলোর দুঃখ-কষ্ট নিয়ে রায়পুর সার্কেল লক্ষ্মীপুর নামের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে কয়েকটি ছবিসহ পোষ্ট দেন স্পীনা রাণী প্রামাণিক।

এতে তিনি লিখেন, “হায়দরগঞ্জ-হাজীমারা বেড়িবাঁধ। সিঁথিকাটা সরু পথ। দু’ধারে সারি বেঁধে খোকসা- সুপারি- নারকেলের অবারিত বসবাস।

আর সেই আদিগন্ত সবুজকে অপূর্ব মায়ায় জড়িয়ে ধরে যেন অলংকার পরিয়েছে হেমাবরণ ‘স্বর্ণলতা’! সৌন্দর্যে দূতি ছড়ায় বলে অনেকে একে ডাকে ‘আলোক-লতা’ নামে।

পথ পেরোলেই নিস্তরঙ্গ খাল। ঘাটে বাঁধা বেশ ক’টি নৌকা; কী সব বাহারি নাম ওদের- গয়না, কোষা, পানসি, বাচারি, পাতাম। এমনকি দেখা মিললো একখানা ‘ঘাসি’ও।

এই যান্ত্রিক যুগে আমরা অবশ্য সবগুলোকেই ‘শ্যালো নৌকা’ নামে চালিয়ে দেই। কী নয়নাভিরাম দৃশ্য! আ হা, আ’মরি বাংলাদেশ।

কিন্তু একটু খুঁটিয়ে দেখলেই এই আপদমস্তক, শ্যামলে শ্যামল তুমি নীলিমায় নীল’ নামক সৌন্দর্য্যরে মোড়ক ছিঁড়ে মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে, কঠোর দারিদ্র্য আর রাক্ষুসে ক্ষুধার এক কঠিন দৃশ্যপট।

পথের ধারে টিনের চালের ঘরে শতশত অসহায় মানুষের বসতি। কারো স্বামী নেই, কারুর আবার স্বামী-সন্তান কেউই নেই। কেউ ভ্যান চালাতো, কেউ ছিলো বাসের কন্ট্রাকটর।

কিন্তু কাজ হারিয়েছে করোনায়। যাদের জীবন ছিলো নদী কেন্দ্রিক, স্থবিরতা এসেছে তাদের জীবনেও। তাই নৌকার খোল, পাটা, ছইয়ে ধুলো জমেছে। অব্যবহৃত পড়ে আছে দাঁড়, বৈঠা, লগি। ওদের কেউ আধপেটা, তো কেউবা নির্ভেজাল উপোস।

মনে পড়ে গেলা মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই বিখ্যাত উক্তি, ঈশ্বর থাকেন এই গ্রামে ভদ্র পল্লতে, এখানে তাহাকে খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে না।”

তার এ ফেসবুক স্ট্যাটাসে মন্তব্য লিখেছেন অনেকেই।

প্রথম আলোর লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি এ বি এম রিপন লিখেছেন, অপূর্ব। অসাধারণ লেখনী। আবারও মুগ্ধতা ছুঁয়ে গেল। পড়তে পড়তে মনে হলো হুমায়ুন আহমেদের কোন গল্প পড়ছি। লেখাটি মুগ্ধতা দিয়ে শুরু – বিস্ময়ে শেষ। মনে অনেকদিন রবে এ মানবিক লেখার রেশ, অভিনন্দন।

সহকারী পুলিশ সুপার স্পীনা রাণী প্রমাণিকের ভাষ্যমতে, সাধ্য এবং সাধের সমন্বয় ঘটিয়ে একেবারে ব্যক্তিগতভাবে তিনি অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছেন।

এটি ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার তার একটি ক্ষুদ্রতম প্রয়াস।

নিজস্ব প্রতিনিধি/লক্ষ্মীপুর/ এমআর

সর্বশেষ খবর

সৌদিতে ভবনের ছাদ থেকে পড়ে বাংলাদেশি যুবকের মৃত্যু

0
  সৌদি আরবে কাজ করার সময় ভবনের ৩য় তলার ছাদ থেকে পড়ে মো. ইউছুপ (২৬) নামে এক যুবকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। বৃহম্পতিবার (৫ অক্টোবর) এ...

জনপ্রিয় খবর