এলাকায় ফিরতে হবে জনপ্রতিনিধিদের, ফেরাতে হবে চিকিৎসাসেবায় শৃঙ্খলা

প্রকাশঃ

কোভিড-১৯, করোনা ভাইরাস। প্রাণঘাতি এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে দুই শতাধিক দেশ ও অঞ্চলে। এর ভয়াল হানা থেকে বাদ পড়েনি বাংলাদেশের মানুষও।

৮ এপ্রিল বুধবার সকাল পর্যন্ত, দেশে করোনায় ১৬৪ জন আক্রান্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের। আর সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছে ৩৩ জন। বিশ্বজুড়ে ১৪ লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৮১ হাজার। দিন দিন দীর্ঘ হচ্ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। জনমনে বিরাজ করছে, আতঙ্ক আর উদ্বেগ উৎকন্ঠা।

করোনা প্রতিরোধে সামিজক সুরক্ষা মানতে সরকারি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঘোষণা করা হয়েছে সাধারণ ছুটির।  এতে করে অঘোষিত লকডাউনে পুরোদেশের মানুষ অনেকটা ঘরবন্দী হয়ে পড়েছে। এতে করে কর্মহীন হয়ে পড়া, খেটে-খাওয়া মানুষেরা চরম বিপাকে পড়েছে।

যদিও গ্রামাঞ্চলে এখনো জনসচেতনার অভাব রয়েছে। তারা সরকারি নির্দেশনা না মেনে, পাড়া মহল্লায় চায়ের দোকানে আড্ডা দেয়ার খবর আসছে গণমাধ্যমে।

স্থানীয়ভাবে প্রশাসন কাজ করলেও নিষ্কৃয় রয়েছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। দেশের অধিকাংশ সংসদ সদস্য ও জেলা উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের অনেকেই এলাকায় উপস্থিতি না থাকার অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে অধিকাংশ সংসদ সদস্য তাদের নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান না করায় সমালোচনার সৃষ্টি হচ্ছে।

এতে করে কর্মহীন হতদরিদ্রদের জন্য সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত সহায়তা সঠিকভাবে বন্টন হচ্ছে না। সহায়তা বিতরণেও নানা অসঙ্গতি দেখা গেছে।

বিশেষ করে কয়েকটি স্থানে সরকারি সহায়তা লুটের অভিযোগ উঠেছে, সরকার দলীয় স্থানীয় কয়েক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। যদিও প্রশাসন তা উদ্ধারও করেছে। জনপ্রতিধিদের অনুপস্থিতির কারনেই, এমন অবস্থা বলে মনে করা হচ্ছে।

তাছড়াও এমন দু:সময়ে জনপ্রতিনিধিদের কাছে না পাওয়ায়, একদিকে তাদের ওপর জনগন আস্থা হারাচ্ছে। অন্যদিকে করোনা প্রতিরোধে মানুষকে ঘরে ফেরাতে সরকারের দেয়া সামাজিক সুরক্ষা নির্দেশনা যথাযথ কার্যকর হচ্ছেনা। ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে প্রাণঘাতি এ ভাইরাস মোকাবেলায় সরকারি না কর্ম পরিকল্পনার। ফলে ভয়াবহ রূপ নিতে পারে মারন করোনা।

এমতাবস্থায় জনপ্রতিনিধিদের অবশ্যই তাদের নিজ নিজ এলাকার অবস্থান করে মানুষের পাশে থেকে মহামারী করোনভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলা করা দরকার।

অন্যদিকে দেশে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবায় বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করার অভিযোগ উঠেছে। করোনায় আক্রান্ত ও সাধারন রোগীরা চিকিৎসা নিতে গিয়ে নানা হয়রানি ও বিড়ম্ভনার শিকার হতে হচ্ছে। চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে আসারও অভিযোগ রয়েছে।

করোনাভাইরাস ঝুঁকিতে হাসপাতালে গিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়ছেন সাধারণ জ্বর ও সর্দি-কাশির রোগীরা। এগুলো করোনাভাইরাসের লক্ষণ হওয়ায় অনেক চিকিৎসক তাদের সেবা দিতে চাইছেন না। ফলে চিকিৎসা নিতে গিয়ে অনেক রোগীকে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ঘুরতে হচ্ছে।

মাগুরা সদর হাসপাতালে এক প্রসূতি রোগীর চিকিৎসায় অবহেলার ভিডিও চিত্র সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। দেশের কয়েকটি স্থানে রোগী হাসপাতালে গিয়েও চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যু হওয়ারও খবর এসেছে গণমাধ্যমে।

সম্প্রতি বিভিন্ন বিভাগে ল্যাব স্থাপনের পর, সেটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সম্প্রসারণ করা হবে বলেও প্রেস ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। মন্ত্রীর বক্তব্যমতে, দ্রুত জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ল্যাব স্থাপন করা হোক। কিটের দাম নির্ধারণ করে, সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনাভাইরাস পরীক্ষার আওতাভুক্ত করে, তা চালু করা হোক।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে সরকারি হাসপাতাল রয়েছে ৬৫৪টি এবং এসব হাসপাতালে মোট শয্যার সংখ্যা ৫১,৩১৬টি। আর বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে ৫,০৫৫টি। এসব হাসপাতালে মোট শয্যা সংখ্যা ৯০,৫৮৭টি।

এছাড়া বছরব্যাপী দেশের ৬০% বেশী মানুষ বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন ।

তাই করোনাভাইরাসের প্রকোপ নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আগেই বেসরকারি হাসপাতালগুলোর রোগ শনাক্তকরণ পরীক্ষা ও চিকিৎসা দেয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে। চিকিৎসায় নানা সীমাবদ্ধতা থাকায়, অন্ততপক্ষে শনাক্তকরণের ব্যবস্থা করতে হবে।

‘লকডাউনের’ এ সময়ে করোনা রোগী ছাড়াও অন্যান্য সকল রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা জরুরী।

আবুল কালাম আজাদ, সম্পাদক, প্রবাস সময়

সর্বশেষ খবর

সৌদিতে ভবনের ছাদ থেকে পড়ে বাংলাদেশি যুবকের মৃত্যু

0
  সৌদি আরবে কাজ করার সময় ভবনের ৩য় তলার ছাদ থেকে পড়ে মো. ইউছুপ (২৬) নামে এক যুবকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। বৃহম্পতিবার (৫ অক্টোবর) এ...

জনপ্রিয় খবর