মিথানল মেশানো অ্যালকোহল পান করলে আক্রান্ত হবেন না করোনাভাইরাসে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া, এমন গুজবে সায় দিয়ে ইরানে প্রাণ হারিয়েছেন তিনশ’ মানুষ।
এছাড়াও বিষাক্ত এই অ্যালকোহল খেয়ে এক হাজারের বেশি মানুষের অঙ্গহানী হয়েছে। ২৬ মার্চ, নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে ঘটনাটি তুলে ধরে। পরে আরও চারশ’ মানুষের মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হয় আর্ন্তজাতিক গণমাধ্যমে।
৭ জুন, করোনা দূযোর্গে দেশে ফেরেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশি চিকিৎসক খন্দকার ফেরদৌস।
তাকে বঙ্গবন্ধু’র খুনী মোশতাকের ভাতিজা ও কর্নেল রশিদের খালাতো ভাই এবং জামাত-শিবির-ছাত্রদলের সাবেক নেতা উল্লেখ্য করে ফেসবুকসহ সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়ায় একটি স্বার্থান্বেষী মহল।
যদিও এসব মিথ্যাচার উল্লেখ করে নিজের ফেসবুকে একাধিক পোষ্ট দেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী চিকিৎসক ফেরদৌস।
তবুও গুজবে কান দিয়েই একতরফা সংবাদ প্রকাশ করেন দেশের মূলধারার কয়েকটি গণমাধ্যম।
হয়ত; এসব গণমাধ্যমের কর্মীরা ইরানের ‘হতভাগা’ মানুষের মতোই, এই গুজবে একের ভিতর দু ই খুঁজছিলেন। মাতালও হলেন, করোনায় মুক্তিও পেলেন!
ডা. খন্দকার ফেরদৌসকে ব্যাক্তিগতভাবে চেনা নেই। তিন মাস আগে নজরে আসে তার ফেসবুক লাইভ।
প্রথমে, আত্মপ্রচারণায় ব্যস্ত মানুষ মনে হয়। একসময় তার দেশের প্রতি ভালবাসা আর মানুষের জন্য কিছু একটা করার চেষ্টায়, মন টানে।
আত্মপ্রচারে যদি মানুষের কল্যাণ হয়। তাতে মন্দ কী। করোনাভাইরাসের এসময় ছাড়াও কয়েক বছর আগ থেকেই তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব ছিলেন। তার উদ্দেশ্য ছিলো গনমানুষের কাছে সহজে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়া।
২০ বছর আগে নিউইয়র্ক পাড়ি জমানো ডা. ফেরদৌসের যে সফলতা, তা একদিনে তৈরী হয়নি। তার জন্য দীর্ঘ সংগ্রাম করতে হয়েছে তাকে।
এক বছরের বেশি সময় ইয়োলো টেক্সিচালক হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। মানুষ হিসেবে কঠোর পরিশ্রমী। দেড় দশকে বাংলাদেশি ছাড়াও বিভিন্ন দেশের অর্ধলক্ষের বেশি রোগীকে সেবা দিয়েছেন।
প্রাণঘাতি করোনার হানায় যখন বিপর্যস্ত নিউইয়র্ক। প্রতিদিন হাজার মানুষের মৃত্যুর খবর। করোনার ভয়ে ঘরবন্দী মানুষ।
সেই সময়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিউইয়র্কে মানুষের পাশে ছিলেন তিনি। সোশ্যাল মিডিয়া ও গণমাধ্যমের কল্যাণে দেশ-বিদেশে তিনি এখন পরিচিত মুখ।
মানবতার কল্যাণে বিভিন্ন কাজের কারনে দেশ-বিদেশে তিনি যেমন প্রশংসিত হন, তেমনি দেশের সুনামও বৃদ্ধি করেন।
যতদূর জানা গেছে, তার জনপ্রিয়তা ও আচরণে মুগ্ধ আওয়ামী লীগের একটি অংশ। তারা, চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক কর্মী ডা. ফেরদৌসকে যুক্তরাষ্ট্রে আওয়ামী লীগের পদে চেয়েছেন।
আর এতেই তিনি জামাত-শিবির-ছাত্রদল এবং বঙ্গবন্ধুর খুনীদের স্বজন হয়ে গেলেন!
তার বিরুদ্ধে জঘন্য সব গুজব ছড়িয়ে অপমান অপদস্থ করা হলো। এ মিথ্যাচারে গা ভাসালেন কয়েকটি গণমাধ্যম।
যুগ পেরিয়েছে, একটানা ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। তবুও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কর্মীদের মূল্যায়ন নেই। উল্টো অনুসারী না হলে কিংবা মতের বিরুদ্ধে গেলেই নিজ দলের সুবিধাভোগী নেতাদের রোষানলে পড়ে হয়রানি, নীপিড়নের শিকার হতে হচ্ছে। গত কয়েক বছর থেকে এমন অভিযোগ রয়েছে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীর।
যুগে-যুগে, দলে-দলে নীতি আদর্শবান দেশপ্রেমী নেতাকর্মীদের ‘বনবাসে’ রেখে স্বার্থান্বেষীরা রাষ্ট্রের সম্পদ লুন্ঠনের ইতিহাস কম নয়।
প্রযুক্তির এ সময়ে তথ্য খুঁজে বের করা গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য দু:সাধ্য কিছু নয়।
রাষ্ট্রের দু’ একটি গণমাধ্যমের তথ্যও যদি ভুলভাবে প্রকাশ পায়, সেটার দায় সকল গণমাধ্যম ও গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর পড়ে। এতে গণমাধ্যমের প্রতি মানুষের আস্থা হারায়।
দল-মত নির্বিশেষে জয় হোক সত্যের। পরাজয় হোক গুজবসৃষ্টিকারী স্বার্থান্বেষীদের। জয় হোক গণমানুষের গণমাধ্যমের।
-আবুল কালাম আজাদ,সম্পাদক- প্রবাস সময়