করোনার তথ্য প্রকাশ করবো, নাকি গোপন রাখবো? এই প্রশ্নটির উত্তর বিভিন্নভাবে দেওয়া যেতে পারে।
ধরেন, আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগ করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কম দেখালো অথবা গোপন করলো।
কম সংখ্যা হলে মানুষ মনে করবে এই আর এমন কি। কত লোক কতভাবে মারা যায়। আঠারো কোটির মধ্যে তিন/চারশ কিছুই না!
অথবা কোন ব্যাক্তির করোনার উপসর্গ দেখা দিলে, বা আক্রান্ত হলেও তথ্য গোপন রাখলো। করোনার ভয়াবহতাকে গুরুত্ব দিল না। এ তথ্য গোপন করার ফলে আক্রান্তকারীর সাথে কাদের সংস্পর্শ হলো তা আর জানা গেলনা। যার ফলে অন্যরা সতর্ক হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্ছিত হলো।
প্রাণঘাতি করোনার যেহেতু জাত ধৰ্ম, বর্ণ নেই। সেহেতু, এই তথ্য গোপনটাই হিতে বিপরীত হতে পারে যে কারোর জন্য। যেমন ধরুন, আক্রান্তকারী ভদ্রলোক হয়তো তার প্রিয় টং দোকানে চা খেলেন।
আবার তিনি যেহেতু সব জায়গায় যাওয়ার এক্সেস রাখেন।সেহেতু সচিবালয়েও একটু ঘুরে আসলেন এসাইনমেন্ট এর অংশ হিসাবে। এতে আক্রান্তকারীর একদিনের ভ্রমণেই হয়তো ধনী গরিব সবাই তার গোত্র ভুক্ত হতে সময় লাগলো না।
এবার আসি তথ্য উম্মুক্ত থাকলে কি লাভ।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে চারজন ফায়ার ফাইটার করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। এরপর কর্তৃপক্ষ ৭০ জন লোককে কোয়ারান্টিনে এ পাঠায়। যদি আক্রান্তকারীরা তথ্য গোপন করতো অথবা ফায়ার ফাইটার কর্তৃপক্ষ তাদের তথ্য গোপন করতো তাহলে অন্যান্যরা সচেতন হওয়ার সুযোগ পেতোনা।
গত পরশু যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমগুলোতে একটা নিউজ পাবলিশ হলো। ওই নিউজটাতে দেখলাম Louisiana এবং Michigan এ দুটো রাজ্যে করোনা আক্রান্তদের ৭০% কালো আমেরিকান। যদিও জনসংখ্যার হিসাবে তারা ২০/৩০ পার্সেন্টের বেশি নয় ওই সব এলাকায়।
এখন তারা গবেষণা শুরু করেছে, কেন তারা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। অথবা মারা যাচ্ছে। বলা হচ্ছে তারা পাবলিক বাসে বেশি চড়ে, জনাকীর্ণ বাসায় থাকে ইত্যাদি।
এবার একটু যদি ভাবি আমাদের দেশের কি অবস্থা। কিভাবে বেশির ভাগ মানুষ বসবাস করে। তাদের যাতায়াত ব্যবস্থা কেমন। কতটুকু হাইজিন মেইনটেইন করে।
আমেরিকাতে করোনার ভেলকি শুরু হয়েছে জাস্ট মার্চের শুরুর দিকে। এখন এটি অনেকটা মৃত্যুপুরী হতে চলছে। আজকে দেখলাম মৃত্যুর হার প্রায় সতেরো হাজার।
আর হয়তো একদিন লাগবে মৃত্যুর হারের দিক থেকেও আমেরিকা ইতালিকে টপকিয়ে যাবে। এমনকি হাসপাতাল গুলোতেও জায়গা নাই, তাই বাড়িতেই বেশির ভাগ লোককে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।
এবার ভাবুন আমাদের জন্য কি অপেক্ষা করছে! আল্লাহ যেন সহায় হোন। আমরা যেন এমন পরিস্থিতির শিকার না হই। করোনার যেহেতু এখনো কোনো প্রমাণিত ঔষধ নেই, তাই প্রিভেন্টিভ মিজারগুলোই আমাদের এখন পর্যন্ত ভরসা। আসুন বেশি বেশি হাত ধুই , মাস্ক পরি, বাসায় থাকি।
জামাল উদ্দিন, সহযোগী শিক্ষক হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্র।